Home > রাজনীতি > হাইকোর্টের সামনের আগুনঃ ‘গোয়েন্দা সংস্থা’ই লাগিয়েছে, আর দায় বিএনপির’

হাইকোর্টের সামনের আগুনঃ ‘গোয়েন্দা সংস্থা’ই লাগিয়েছে, আর দায় বিএনপির’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, হাইকোর্টের সামনে মোটরসাইকেলে আগুন দেয়ার ঘটনায় ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ফাঁসানো হয়েছে। এই আগুন ‘গোয়েন্দা সংস্থা’র লোকজনই লাগিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘অবৈধ সরকারের চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে দেখে আবারও অস্থির হয়ে গেছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আবারও উদ্ভট, বানোয়াট, আজগুবি মামলার প্লাবন বইয়ে দিচ্ছে। সরকারের মত পুলিশরাও এখন গায়েবি তথ্য উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে সিনিয়র নেতাদের নামে একের পর এক মামলা দিয়েই যাচ্ছে। মৃত ব্যক্তি, কারাবন্দি নেতাদেরও গায়েবি মামলার পাইকারি আসামি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার বর্তমানে নতুন কোনও ইস্যু পাচ্ছে না। তাই আগের মত আবার আগুনের খেলা শুরু করছে। বুধবার মধ্যরাতে এই মধ্যরাতের ভোট ডাকাত সরকার তাদের ‘খয়ের খাঁ’ পুলিশকে দিয়ে আমাদের ১৩৫ জন নেতাকে আসামি করে মোটরসাইকেল পোড়ানোর উদ্ভট দুই মামলা করেছে। হাইকোর্ট এলাকায় বেওয়ারিশ দুই মোটর সাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা।’ঢাকা-দিল্লির সোনালি অধ্যায় কি শেষের দিকে
চরম হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন ভার পাওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিল ‘বাংলাদেশি’, ‘মুসলিম’ বিভিন্ন ইস্যু। এসব ইস্যুতে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারও বাংলাদেশ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তারা বার বার সেদেশে বাস করা কিছু মুসলিমদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।

তবে বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বাংলাদেশ সরকার এড়িয়ে গেছে। কারণ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ বলে আশ্বাস দেন।

তবে সম্প্রতি সময় আসামে নাগরিকত্ব ইস্যু এই বিতর্ক নতুন করে রূপ দেয়। গত নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকানো আর ব্যাপক বিক্ষোভ ও আপত্তির মুখেও ‘নাগরিকত্ব সংশোধন বিল-ক্যাব’ পাস হওয়ায় এই বিতর্ক চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।

এসব বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের যে সোনালি অধ্যায় চলছিল তা ভাটা পড়ার আশঙ্কা করছেন ভারতীয় রাজনৈতিক ও বিশ্লেষকরা।

দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ–ভারতের সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে নেতারা বর্ণনা করলেও ভারতীয় পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে তীব্র বিতর্কের পর ঢাকার পক্ষ থেকে অস্বস্তি আরও বাড়বে—এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। রাজ্য সভায় ওই বিল পাস করার আগেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অমিত শাহের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না। বরং তাঁরা শান্তি এবং সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছেন।

বৃহস্পতিবারের তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত যা বলছে তা সত্য নয়। বিশ্বের খুব কম দেশই আছে, যেখানে বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান। আমাদের কোনো সংখ্যালঘু নেই। আমরা সবাই সমান। তিনি যদি বাংলাদেশে কিছুদিন থাকেন, তিনি এখানকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ দেখতে পাবেন।’ মোমেন বলেন, ‘ভারতের নিজেরই অনেক সমস্যা বিদ্যমান। বন্ধুদেশ হিসেবে আমরা আশা করি, ভারত এমন কিছু করবে না যাতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়।’

বাংলাদেশের মানুষ সমুদ্র সাঁতরে ইতালিতে যাবে, তবু ভারতে আসবে না- বাংলাদেশের বিদায়ী হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর এমন বক্তব্যও তুলে ধরে গণমাধ্যমটি।

এতে বলা হয়, ‘সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে আমাদের নিয়ে সমালোচনা হয়। কিন্তু আমি বলতে পারি, বাংলাদেশের মানুষ সমুদ্র সাঁতরে ইতালিতে যাবে, তবু ভারতে আসবে না। যেসব দেশে বাংলাদেশের মানুষ ভালো আয় করতে পারবে, সেখানে যাবে কিন্তু ভারতের মতো কম আয়ের দেশে আসবে না।’

বিদায়ী হাইকমিশনার ভারতের তার বিদায় অনুষ্ঠানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এ অঞ্চলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অন্যদের তুলনায় ভালো। এ বছর ৮ থেকে ৮.১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ। ২০২০ সাল নাগাদ ভারতকেও ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।

দৈনিকটি বাংলাদেশের একাধিক কূটনীতিকদের বক্তব্য তুলে ধরেন। একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ভারতের এসব অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে ভারতের নেতাদের কথাবার্তা ও তাড়ানোর ভয় বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারের সময় তাদের আচরণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে বলেই তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তাদের কী জবাব দেবেন?’

নাম প্রকাশ না করে আরেক কূটনীতিক বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশ। ভারতের মতো একজন বন্ধু এনআরসি নিয়ে এভাবে কেন আচরণ করছে, তা বোধগম্য নয়।’

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোয় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হলেও সমুদ্রসীমা ও সীমান্ত সমস্যা সফলভাবে সমাধান হয়েছে।