Home > রাজনীতি > হঠাৎ বিএনপির নেতাদের ভিন্ন সুর!

হঠাৎ বিএনপির নেতাদের ভিন্ন সুর!

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির আগে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন এবং মানববন্ধনে আন্দোলনের বিষয়ে অনেক কথাই বলেছেন। এমনকি খালেদা জিয়ার জামিন না হলে এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল দলটি। কিন্তু বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মিছিল কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা যাচ্ছে দলটিকে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির একদিন পরেই আন্দোলনের বিষয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের সুর পাল্টেছে। আন্দোলনের বিষয়ে তাদের মুখে এখন ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে। তারা বলছেন, আন্দোলনের বিষয়ে তারা কোন মন্তব্য করতে পারবেন। এ বিষয়ে শুধু মাত্র কথা বলবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর আগে গত ২৯ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা যদি দেখি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্ত হন নাই। তাহলে বুঝতে হবে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, তার সরাসরি হস্তক্ষেপে বেগম জিয়া মুক্ত নাও হতে পারেন। আর সেটা হলে, আমি বলতে চাই- এদেশে শুধু এক দফার আন্দোলন হবে। তা হবে, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলন।

তবে আজ (শুক্রবার) আন্দোলনের বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এটা দলের বিষয়। তাই এবিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলবেন।

গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে অপর এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারকে বলবো, মেডিকেল রিপোর্টের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের রিপোর্ট। এই রিপোর্টটা বুঝে নেন। এই রিপোর্ট যদি না বুঝেন তাহলে স্বৈরাচারের যে অবস্থা হয়েছে, স্বাধীনতার আন্দোলন যেভাবে হয়েছে, ভাষা আন্দোলনে যেভাবে জয়ী হয়েছে, বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আমরা জয়ী হবো ইনশাল্লাহ। গণতন্ত্র জয়ী হবে, বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত হবে আবার।

আন্দোলনের বিষয়ে আজ (শুক্রবার) আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আন্দোলনের সিদ্ধান্ত। এবিষয়ে দলের মহাসচিব বলবেন। আমি কিছু বলতে পারবো না।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমরা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে। ঢাকা মহানগরে প্রতি থানায় থানায় বেলা দুইটার পর থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই হচ্ছে আপাতত আগামী রোববারের জন্য এই কর্মসূচি। পরের কর্মসূচি এরপরে ঘোষণা করবো।

অপরদিকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হলেও রাজপথে কাঙ্খিত কোনো কর্মসূচিতে দেখাতে পারিনি বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কোন কোন অঙ্গ সংগঠনকে রাজপথে ঝটিকা মিছিলের করে কর্মসূচি করলেও মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, তাঁতীদল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দলের কোনো নেতাকর্মীকেই দেখা যায়নি। এছাড়া দলের বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাই ছিলেন নিষ্ক্রিয়।

এ বিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা কি করছেন? ঢাকা যেসব সিনিয়র নেতা আছেন, তারা নিজেরা যদি ১ শত কর্মী নিয়ে রাস্তায় নামে তাহলেই তো রাজপথ দখল হয়ে যাবে। কিন্তু তারা সেটা করবেন না। কারণ তারা নিজেদেরকে এবং তাদের রক্ষার্থে সরকারের সাথে সমঝোতা করছেন।

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে এবং আমরা বৃদ্ধ হয়েছি। এখন তরুণদের সময়। তরুণেরাই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা এ বিষয়ে বলেন, তৃণমূল অথবা অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলে সিনিয়র নেতারা রাজপথে নামলে তারাও নামবে। এটা কোনো কথা হতে পারে না। কারণ আমরা যারা সিনিয়র নেতা, তাদের বয়স ৭০ বছরের উর্ধ্ব। রাজপথের আন্দোলন তো সব সময় তরুনরাই করে। অঙ্গ সংগঠনগুলো সাহস করে না নামলে আমরা কি করতে পারি। সিনিয়র নেতাদের ধারণা ছিল, অঙ্গ সংগঠনগুলো অন্তত খালেদা জিয়ার জন্য শক্ত বাধা অতিক্রম করে হলেও রাজপথে নামবে।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের প্রতিষ্ঠান ইস্ট এশিয়াটিক অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে চাকরি করতেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) আসাদুজ্জামান নূর প্রতিমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলে সে সময়ের কয়েকটি মুহুর্তের ছবি শেয়ার করে ডা. এনামুর রহমান তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানান।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার আসাদুজ্জামান নূরকে নিজের দফতরে দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তাকে ঢুকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন ডা. এনামুর। এ সময় আসাদুজ্জামান নূর তাকে বুকে টেনে নেন।

এক পর্যায়ে নিজেদের স্মৃতিকথায় হারিয়ে যান দু’জন। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে এই মুহুর্তের কিছু ছবি শেয়ার করে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, “তখন আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র। বাবা নেই। মা, চার ভাই, তিন বোন। সন্তানদের মধ্যে আমি সবার বড়। টানাটানির সংসার। তার ওপর মেডিকেলের বইপত্র কেনা। অনেক খরচ। শেষমেষ বাড়তি রোজগারের আশায় শিক্ষার্থী অবস্থায় কাজ নিলাম একটা মার্কেট রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে। ইস্ট এশিয়াটিক অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেড।”