Home > রাজনীতি > পরকীয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতার বিচার চেয়ে তারেক রহমানকে চিঠি

পরকীয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতার বিচার চেয়ে তারেক রহমানকে চিঠি

বিএনপির কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের বিরুদ্ধে প্রতারণা অসদাচরণ ও নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. আতিকুর রহমান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদন করা আবেদনটি গত ১৪ ডিসেম্বর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কাছে জমা দেন বলে নিশ্চিত করেছেন আতিকুর রহমান। আবেদনের অনুলিপি ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তারেক রহমানের কাছে করা আবেদনে ব্যারিস্টার মো আতিকুর রহমান লিখেছেন, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদ্যগঠিত কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য। সেই সাথে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য। ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কায়সার কামাল বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক।আমি সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত আইনজীবী হওয়ার সুবাদে রাজনৈতিক ও অন্যান্য মামলায় সরাসরি মোহাম্মদ কায়সার কামালকে সহযোগিতা করতাম।

সে একসময় থাইল্যান্ডে অবস্থানকালে রাজনৈতিক মামলার আসামি হলে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের ব্যপারে একটি রিট মামলা করে সফল হই এবং তাকে তার অসুস্থ বাবাসহ বাংলাদেশে আসার পথ সুগম করি। আমার এই বিশ্বাস ভালোবাসা ও ও আন্তরিকতার সুযোগ নিয়ে সে আমার সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার প্রাক্কালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুরু হলে সে আমার বাসায় আশ্রয় চায়। আমি সরল বিশ্বাসে আমার শ্বশুরশ্বাশুড়ি এবং স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে মানবিক কারণে তাকে বাসায় আশ্রয় দেই।

আমার স্ত্রী নুসরাত জাহান দিপা স্কয়ার হসপিটালে ডায়েটিশিয়ান হওয়ার সুবাদে মো. কায়সার কামাল তার দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তান সম্ভবা হলে আমার স্ত্রীর মাধ্যমে নিয়মিত স্কয়ার হসপিটালের ডাক্তার অ্যাপয়নমেন্ট করতো। শুধু সেই নয় অন্যান্য ব্যারিস্টারের সাথে আমার সুসম্পর্ক থাকায় অনেক ব্যারিস্টার ও আইনজীবী আমার স্ত্রীর মাধ্যমে ডায়েট চার্ট বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য আসলে আমার স্ত্রী সর্বাত্মক সহযোগিতা করত। তার সাথে আমার সম্পর্কের সুযোগের অপব্যবহার করে এবং আমাকে আমার স্ত্রী,আমার শ্বশুরশ্বাশুড়ি শ্যালকসহ সকলকে প্রতারিত করে প্রতারণার মাধ্যমে আমার সম্মতি অর্জন করে আমার বাসায় এসে এবং আমার স্ত্রীর সরলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন মূল্যবান উপহার সামগ্রী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ ফেলে তার সাথে সম্পর্ক করে তোলে।

এ কারণে আমি অনেকদিন যাবত সন্দেহ করেছিলাম এবং এ বিষয়ে আমিও আমার শ্বশুরশ্বাশুড়ি শ্যালকসহ সকলেই আমার স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করি। মাসখানেক আগে আমি সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে ফেরার পথে কলাবাগান থানা দিন নর্থ সার্কুলার রোডে দেখতে পাই যে আমার স্ত্রী মোহাম্মদ কায়সার কামালের গাড়ি থেকে নামছে। পরদিন সকালে আমার স্ত্রীর ব্যাগে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত স্কয়ার হসপিটালের একটি কাগজ পাই। এ বিষয়ে আমি আমার শ্বশুরশাশুড়ি কে অবহিত করলে তারা আমার স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং মো. কায়সার কামালকে দুই সপ্তাহ আগে আমার শাশুড়ি ফোন করে এ পথ থেকে সরে আসতে বলেন।

গত ৩ ডিসেম্বর আমার শাশুড়ি পুনরায় মো. কায়সার কামালকে ফোন করে বলেন তিনি যেন এ পথ থেকে সরে আসেন এবং কোনো অবস্থাতেই যেন তার মেয়েকে বিরক্ত বা ফোন না করেন অন্যথায় আল্লাহর নিকট দায়ী থাকবেন। তাকে বোঝানোর পরেও সেই অবস্থান থেকে সরে আসেনি পরে চার তারিখে বেলা চারটার দিকে আমি সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে বের হওয়ার সময় দেখতে পাই মোহাম্মদ কায়সার কামালের গাড়ি আমার সামনে দিয়ে বের হচ্ছে।

আমার ফুফাতো ভাই মোহন যে আমার চেম্বারে ম্যানেজার আমার সাথে আমার গাড়িতে ছিল। আমি মোহনকে বলি তাই স্যারের গাড়ি যাচ্ছে আমার মনে হয় তার গাড়িটি আজ আমাদের ফলো করা উচিত। আমি তার গাড়ি ফলো করতে করতে স্কয়ার হসপিটাল পর্যন্ত আসি এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখতে পাই আমার স্ত্রী তার গাড়িতে উঠছে। তাৎক্ষণিক আমি আমার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দৌঁড়ে তার গাড়িতে দরজা টান দিয়ে তাকে হাতেনাতে ধরি।

তারপর মোহাম্মদ কায়সার কামাল দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উপস্থিত জনতা তার গাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে উপস্থিত ট্রাফিক পুলিশ ও জনতা কলাবাগান থানায় অবহিত করলে কলাবাগান থানার ডিউটিরত এসআই মো. আওলাদ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ তাকে দ্রুত থানায় নিয়ে আসে। বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির নীতিনির্ধারক ব্যক্তি যে কিনা এরকম বিশ্বাসঘাতক প্রতারক রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে দেশ জাতি এবং দল অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

মো. কায়সার কামালের দ্বিতীয় স্ত্রী মনির বাড়ি নেত্রকোনার বিরিশিরি উপজেলায়। কায়সার কামালের কাছে আইনি পরামর্শের জন্য আসলে সে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং মনি তার স্বামীকে তালাক দিয়ে মোহাম্মদ কায়সার কামালকে বিয়ে করে। এর ফলশ্রুতিতে তার প্রথম স্ত্রী যার সম্পূর্ণ অর্থায়নেই কায়সার কামাল লন্ডন থেকে ডিগ্রি অর্জন করে আত্মসম্মানের ভয়ে ১৪ বছরের ছেলেকে তার চাপে রেখে তালাক দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

আমার সাত বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সে ধানমন্ডিতে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে এবং এক বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার এহেন চরিত্রহীন কর্মকাণ্ড আমার এত বছরের পরিশ্রমের সাজানো সংসার ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। আমার দীর্ঘদিনের অর্জিত আইন পেশা ও সামাজিক সুনামকে নষ্ট করেছে। দেশ দল এবং জনগণের উপকার করতে এসে তার এই হীন কর্মকাণ্ডের জন্য আমার পারিবারিক পেশাগত এবং সামাজিক সুনামকে জলাঞ্জলি দিতে হলো।

আতিকুর রহমান আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, আমি আইন পেশায় ও ব্যক্তি জীবনে নিজেকে সৎ রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার চেষ্টা করি। আমি বিবেকের তাড়নায় বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় কলাবাগান থানায় ৪ তারিখে মামলা করি। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে আমাকে সে দেখে নিবে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয় এই বলে, ‘আমি জেল থেকে বের হয়ে আসলে তোমার কি হবে।’

এ বিষয়ে ১১ ডিসেম্বর কলাবাগান থানায় জিডি করি। বিএনপি দেশের সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আস্থা নির্ভরতার ভালোবাসার একটি দল যেখানে এই ধরনের লম্পট ব্যক্তি যুক্ত থাকলে তা দলের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য হুমকি। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।