ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে ঘুরে-ফিরে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত হওয়া ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক (ডাকসুর এজিএস) সাদ্দাম হোসেন।
এ ঘটনায় সরাসরি সংশ্লিষ্ট তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও ইন্ধনদাতাদের ব্যাপারে এখনো সরাসরি কিছু বলা হচ্ছে না।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানেও সেই তিনজনের দিকেই যাচ্ছে অভিযোগের তীর।
গণমাধ্যমের হাতে আসা একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাকসু ভবনে ভিপির কার্যালয়ে নুর ও তার সহযোগীদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটে তার ইন্ধনদাতা তিনজন। তারা হলেন- চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত হওয়া ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক (ডাকসুর এজিএস) সাদ্দাম হোসেন। এই তিনজনের ইন্ধনেই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ডাকসু কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, ডাকসুর ভিপি সরকারবিরোধী বক্তব্য দেয়ায় এবং ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কথা বলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোভ থেকে নুরুল হক নুরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধা দিতেন তারা।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও সমাবেশের অর্থযোগানদাতা ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী। ছাত্রলীগ থেকে রাব্বানী অপসারিত হওয়ার পর তাকে স্বপদে বহালের দাবিতে টানা আন্দোলন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সেসময় এই মঞ্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জাবি উপাচার্যের অভিযোগের পরই অপসারিত হতে হয় রাব্বানীকে।
গত রবিবারের (২২ ডিসেম্বর) ডাকসু ভিপি নুর তাদের ওপর হামলার পেছনে তিনজনকে ইন্ধনদাতা বলে চিহ্নিত করেছেন। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘তখন ডাকসুতে ২০-২৫ জন ছিল। আমরা রুমে ঢুকছিলাম, তখনই পেছন থেকে তারা অতর্কিত হামলা করে। … সাদ্দাম ও সনজিত (ছাত্রলীগ নেতা) আমার রুমে ঢুকে আমার সঙ্গের নেতাকর্মীদের মারতে মারতে বাইরে বের করে আনে। তিনজনকে ডাকসুর ছাদ থেকে ফেলে দেয়। সনজিত নিজে আমাকে ধাক্কা মারে। সনজিত বলে, ‘জামায়াত-শিবির এখানে আসছিল কেন?’ আমি বলি, ভিপির রুমে কে আসবে, না আসবে আপনি ঠিক করার কে? তখন সনজিত বলে, ‘… আমি কে, কিছুক্ষণ পর টের পাবি।’ এটা বলার পর তারা বের হয়ে যায়। পাঁচ মিনিট পর তারা লাইট বন্ধ করে বাঁশ-রড দিয়ে আমাদের মারতে শুরু করে ‘
এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এটি সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ ও নিজস্ব গবেষণার জন্য। এসব নিয়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলার কিছু থাকে না।’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা এই ঘটনা থামানোর জন্য চেষ্টা করেছি। আমি আর আমাদের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসু ভিপির রুমে গিয়েছি যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। কিন্তু এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সে নিজেই (নুরুল হক নুর) দায়ী।’
অভিযোগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার কল দিলেও তার তিনটি মোবাইল নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। বন্ধ পাওয়া যায় ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি।