ইন্টারনেট শাটডাউনের ফলে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি) উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ। তিনি বলেন, যে সকল ক্ষুদ্র এবং মধ্যম পরিসরের উদ্যোক্তারা অনলাইন বা ফেসবুকের উপর নির্ভরশীল, গত জুলাই-অগাস্ট মাসের লাগাতার ইন্টারনেট শাটডাউনে, তারা অধিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন । সেই সঙ্গে আউটসোর্সিং সেক্টরেও ধস নেমেছে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) ইন্টারনেট শাটডাউন বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন স্বপন মাহমুদ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ভয়েস’ সভার আয়োজন করে।
সভায় উপস্থিত বক্তারা ইন্টারনেট শাটডাউন এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সাধারণ মানুষের ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্বরূপ যা সাধারণ জীবনযাপন, চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে প্রতিটি পেশাগত ক্ষেত্রে, জীবন-জীবিকা বিশেষত গ্লোবাল ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, ইত্যাদির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, সারাবিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অত্যন্ত জনপ্রিয় ও অপরিহার্য মাধ্যম। ইন্টারনেটে মানুষের প্রবেশাধিকার যদি সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন ও মতপ্রকাশের অধিকারসহ প্রায় সকল বিষয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মতবিরোধ ও সংকটকালে, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হলে অনলাইন যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাতে সার্বিক অর্থনীতিতে চরম সংকটের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত বাণিজ্যিক ক্ষেত্রগুলো পিছিয়ে পড়ছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। সেই সঙ্গে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন বাণিজ্যিক পরিসরসহ আমদানি ও রপ্তানি ক্ষেত্রসমূহ।
সভায় উপস্থিত নারী উদ্যোক্তারা ইন্টারনেট শাটডাউনে তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে আর্থিক ক্ষতি, জীবন ও জীবিকায় এর কঠিন বাস্তবতার কথা তুলে ধরে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা বলেন, ইন্টারনেট শাটডাউন নিয়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব আছে যা আগামী দিনগুলোতে তাদের জন্য আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে, সরকারের আন্তরিকতা, সুষ্ঠু আইন প্রণয়ন এবং ইন্টারনেট শাটডাউনের সম্ভাব্যতা উদয় হলে আগে থেকে ঘোষণা দেওয়ার মত উদ্যোগ নেওয়া হলে, ব্যবসা ক্ষেত্রে অতীতে যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে, তা অনেকাংশে কমে আসবে বলে তারা মনে করেন।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রেজওয়ান ইসলাম বলেন, ইন্টারনেট শাটডাউনে আর্থিক ক্ষতি নির্ণয়কারী ওয়েবসাইট – নেটব্লকের হিসাব অনুসারে, ইন্টারনেট শাটডাউনের ফলে বাংলাদেশ একদিনে ৭.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখোমুখি হয়।
জাতীয় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি বা গ্রোস ডমেস্টিক প্রডাক্ট) বেসরকারি খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ের অনবদ্য ভূমিকা তুলে ভয়েসের উপ-পরিচালক মুশাররাত মাহেরা বলেন, দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, আমাদের সবাইকে একযোগে ইন্টারনেট শাটডাউনের নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে এগিয়ে আসতে হবে।