Home > জাতীয় > ‘বাপ-চাচারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেই সচিব হয়েছি’

‘বাপ-চাচারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেই সচিব হয়েছি’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাপ-চাচারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন বলেই সচিব হতে পেরেছি।

রোববার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গালিমপুর, কলাকোপ ও কৈলাইল ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সচিব এসব কথা বলেন।

রোববার আগল প্রগতি সংঘের উদ্যোগে মহাকবি কায়কোবাদ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মাঠে ১০৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেয়া হয়।

মনোয়ার আহমেদ বলেন, বর্তমানে যে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি পাক আমলে তা কল্পনাও করা যেতো না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন তারই সুযোগ্য কন্যা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এখন বিদেশিরা আমাদের ঋণ দিতে ভয় পায় না। দেশীয় অর্থায়নে মেগা প্রকল্প পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন বড় মাইল ফলক।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে সচিব বলেন, সমস্ত তরুণ সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সন্তানদের নিকট মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরতে হবে। আমার দুই সন্তানকে সব সময় মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাই। কিভাবে বাপ-চাচারা দেশ স্বাধীন করেছে সেই গল্প বলি তাদের।

সচিব বলেন, আমার পিতা মরহুম বদরুদ্দীন আহমদ ওরফে বদু পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক পরিচালক হিসেবে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে কর্তব্যরত অবস্থা বাবা মৃত্যুবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পরিবার নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন রোডে থাকতেন। আমার পিতা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি যুদ্ধে জড়িত না হলেও চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই সন্ধ্যায় ২ থেকে ৩ জন প্রতিবেশি নিয়ে ঢাকার মানিকনগরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হতেন। মুক্তিযুদ্ধে চাচাদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন। নিজ ও প্রতিবেশিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ এবং অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হতেন। এছাড়াও উচ্চ পর্যায়ে চাকরি করতেন বিধায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গোপন সংবাদ পৌঁছে দিতেন। দীর্ঘদিন পরে আপনারা আমার পিতাকে স্মরণ করছেন বলে সন্তান হিসেবে আমি ধন্য।’

ইআরডি সচিব আরো বলেন, আমার মেজ চাচা ইপিআর-এর সাবেক সুবেদার মেজর বীর মুক্তিযোদ্ধা রাহাত আলী ২ নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বীর মু্ক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরী তখন ঢাকা সদর দক্ষিণের কমান্ডর ছিলেন। চাচা রাহাত আলী হালীম চৌধুরীর অধীনে নবাবগঞ্জ থানার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডর হিসেবে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে এলাকায় প্রতিরোধ গতে তোলাসহ বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করেন। আমার সেজ চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শামসুল আলম ওরফে আ: হামিদ ২ নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। হামিদ চাচা পরবর্তীতে প্রথম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আগলা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ছোট চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আঃ মান্নানও ২ নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এমন একটা পরিবারকে আপনারা সম্মাননা দিয়েছেন। এর থেকে আমার জীবনে পাওয়া আর কিছু হতে পারে না।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কেউ পরিশোধ করতে পারবে না। আমাদের সম্মাননা মানেই প্রাণের উচ্ছ্বাস। আমাদের পরিবারের সন্তানেরা আরো বেশি বেশি দেশ সেবা করার সুযোগ পায় এটাই কামনা করি বলেন সচিব।

সাবেক গণপরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ সুবিদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) সাহিন আহমেদ চৌধুরী, আগল প্রগতি সংঘের সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদন ও সাধারণ সম্পাদক রতন সাহা প্রমূখ।