স্বেচ্ছাসেবী, জনকল্যাণ ও নারী কল্যাণমূলক সংগঠন ‘চেষ্টা’র সভাপতি লায়লা নাজনীন হারুনের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। কল্যাণমূলক সংগঠনটিকে এখন নাচ-গানের সংগঠনে পরিণত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানানো হয়েছে।
রোববার (২ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সহ-সভাপতি রাফেয়া আবেদীন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘চেষ্টা’ একটি নারী সংগঠন। ২০১৩ সালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধিত পায় সংগঠনটি। এটি একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী, জনকল্যাণ ও নারী কল্যাণমূলক সংগঠন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুবিধা বঞ্চিত নারীদের সাহায্য করে মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে সংগঠনটি। বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নির্যাতীত নারীদের এবং সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিতের মাঝে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে ‘চেষ্টা’ সংগঠন। এ কাজে সংগঠনের সদস্য চাঁদা ছাড়াও সরকার ও বিত্তবানদের অনুদানে চলছে সংগঠনটি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, চেষ্টার গঠনতন্ত্র অনুযায়ি নির্বাচিত একটি কমিটিসহ সাধারণ সদস্যসের নিয়ে কাজগুলো করে আসছিলো। কিন্তু সংগঠনের বর্তমান সভাপতি নির্বাহী কমিটির কোন মিটিং না ডেকে তার পছন্দের দুই তিনজন সদস্যকে নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে সংগঠনের টাকা তসরূপ করছেন। যা স্বনামে পরিচিত সংগঠনটির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নে কাজ করছিল তা বাদ দিয়ে সভাপতি ও একজন উপদেষ্টার একক সিদ্ধান্তে অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। তারা এখন নাচ-গানের সংগঠনে পরিণত করছে।
রাফেয়া আবেদীন বলেন, বর্তমান সভাপতি লায়লা নাজনীন ও সাধারণ সম্পাদক দিলরুবা বেগম এবং তার ভাইয়ের মেয়ে কোষাধ্যক্ষ সিফাত ই নূর একক সিদ্ধান্তে কাজ করছে। আমরা আমাদের সংগঠনে বিতর্কীত উপদেষ্টা না রাখার আপত্তি জানালেও সভাপতি অজ্ঞাত কারণে বাদ দিচ্ছেন না। সংগঠনের টাকা তসরূপ এবং অগঠনতান্ত্রিকভাবে গায়ের জোরে কমিটি বহাল রাখায় আমরা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করি। মন্ত্রনালয় তদন্ত সাপেক্ষে কমিটি বিলুপ্ত করার নির্দেশ দেয় এবং পাঁচজনকে দিয়ে এডহক কমিটি গঠন ও ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন কমিটি গঠনের কথা বলে। একই সঙ্গে অপর একটি স্মারকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সংগঠনের একাউন্ট বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এ সবের কোন তোয়াক্কা না করে সভাপতি লায়লা নাজনীন তার অনুগত সদস্যের যোগসাজসে সংগঠনের টাকা উত্তোলন করে ইচ্ছেমত ব্যয় করছে। বিশেষ ক্ষমতা বলে আবার ব্যাংক একাউন্ট চালু করেছে। এমনকি দেশে ও দেশের বাইরে থেকে যে অনুদান পাওয়া যাচ্ছে তার কোন হিসাবও দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা তার স্বেচ্ছাচারীতার কারণে সংগঠনের অনুদান কমে যাচ্ছে, কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। প্রথম দিকে আমরা বছরে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা অনুদান পেয়ে থাকতাম। কিন্তু গত তিন বছরের কোন হিসাব আমরা পাচ্ছি না। কোন অডিট রিপোর্ট নাই। আমরা বারবার সভাপতিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার ইচ্ছেমত সংগঠন চালাবো। অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দিয়ে, বলে কোন লাভ হবে না। এসব অফিস আমার শাড়ীর আঁচলে বাঁধা। পারলেও মারীর অফিসে যান তবে ওখানেও কিছু করতে পারবেন না। ওখানেও আমার লোকজন রয়েছে।
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, লায়লা নাজনিন হারুন সভাপতি হওয়ার পর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ বেশ কিছু সদস্যেরপদ খারিজ করে দিয়েছে। গঠনতন্ত্র না মেনে এরই মধ্যে সে প্রায় ২০ জনকে সদস্য করেছে। যাকে খুশি তাকে সদস্য বানানোর প্রক্রিয় অব্যাহত রেখেছে। আমরা সংগঠনের অর্থ আত্মত্মসাৎ ও অনিয়মের জন্য সভাপতির পদত্যাগ ও বিচার দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সেলিনা বেগম শেলী, সাধারণ সদস্য সাদেকুন নাহার পাপড়ি, ভিকারুন্নেসা চিনু, সাজেদা আহমেদ, নির্বাহী সদস্য শাহীন জুলিয়া প্রমুখ।
/এমএইচএন/