Home > বিশেষ সংবাদ > খেপেছেন দুই মন্ত্রী

খেপেছেন দুই মন্ত্রী

দেশের মহাসড়কের আয়ুষ্কালের চ্যালেঞ্জ হলো- দেশের মাটি, পানি, গাছ, দোকান, নদী ও ট্রাক ওভারলোডিং। গতকাল বৃহস্পতিবার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মহাসড়কের লাইফটাইম: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে খাত সংশ্লিষ্টরা এগুলোকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড় করান। এ সময় তারা ‘সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে’ পৃথক তহবিলের দাবিও জানান। পাশাপাশি সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেন।

বিভিন্ন দাবি জানালেও সড়কের বেহাল নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি। আর এতেই খেপেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। অর্থমন্ত্রী খ্যাপে গিয়ে রাস্তার বেহাল বর্ণনা দিয়ে প্রকল্প বন্ধ করার হুমকি দিলেন। আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আরও একধাপ এগিয়ে নিজেই প্রেজেন্টেশনে দেখালেন সড়কের বেহাল, নকশায় ভুল।

তিনি বলেন, প্রকল্পের দায়িত্বে যিনি থাকেন তিনি কিছুই দেখেন না। নকশাও দেখেন না। এর কয়েকটি উদাহরণও দিলেন। প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ফিটনেসবিহীন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি আরও বলেন, আপনাদের বাজেট বাড়বে কেন? আপনারা তো সব টাকা নষ্ট করছেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি-বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।

একনেকের প্রায় প্রতিটি সভায় সড়কের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। অথচ সড়ক ঠিক হচ্ছে না—এমন ক্ষোভ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সভায় একটি করে প্রকল্প। এত রাস্তা কেন নিচ্ছেন?

রাস্তা খারাপের কারণ হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার বৃষ্টি ও গাছকে দায়ী করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তো নদী থাকবেই। বৃষ্টি থাকবেই। জীবনে আর কোনো দিন কোনো মিটিংয়ে এগুলো বলবেন না। এটা ঠিক না। এগুলো কাকে বোঝাচ্ছেন? নিজেরা কাজ করতে পারেন না, না হয় বোঝেন না।

অর্থমন্ত্রীর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে বলে জানান সড়কসচিব। মন্ত্রী বিরক্তি নিয়ে বলেন, রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে এলাকায় গেলে মানুষ গালি দেয়, গাড়ির গ্লাস নামাতে পারি না। কেন? কারণটা কী? আমরা কি অন্যায় করেছি? রাস্তা ঠিক করতে ইংল্যান্ডের নাম্বার ওয়ান কম্পানিকে নিয়ে এলাম। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেওয়া হলো না। কেন দেওয়া হলো না তা আমরা জানি। একেকজন ১০-১২টা করে কাজ নিয়ে বসে আছে। প্রধানমন্ত্রী হাজারবার বলার পরও সড়কের কাজ ঠিক হয় না।

এ সময় তিনি প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাস্তায় যে গাড়ি চলে সেগুলোর টায়ার ঠিক আছে কি না কোনো দিন দেখেছেন? জীবনেও না। কাজ করেন মনের আনন্দে। প্রতিদিনই মনের আনন্দে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আসছেন। আমরাও বন্ধ করে দেব। টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দেব, প্রজেক্টও বন্ধ করে দেব। টাকা না পেলে কাজ করবেন কোথা থেকে? আপনারা যদি সরকারকে সহযোগিতা করেন তবে সরকারও সহযোগিতা করবে।

এর আগে সড়কের দুরবস্থা সবার সামনে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি এ সময় বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো সড়ক বানাচ্ছে সিঙ্গাপুর। তারপর সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, হংকং, জাপান আছে। আর কানেকটিভিতে সৌদি আরব, স্পেন, সুইডেন, সাউথ আফ্রিকা, জার্মানি। কিন্তু সবচেয়ে শেষের নামটি হলো নামিবিয়া। তাদের মাথাপিছু আয় মাত্র ৫ হাজার ডলার। একটা স্বল্প আয়ের দেশ কানেকটিভিটিতে চ্যাম্পিয়ন। আর আমরা আমাদের সড়কের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেশের মাটি, পানি, গাছ, দোকান, নদী, ট্রাক ওভারলোডিংকে দায়ী করছি। অর্থাৎ আমাদের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা সব অন্যের ঘাড়ে।

প্রেজেন্টেশনে বিআরটিএর একটি ছবি দেখিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘অনেক লোক ফরম পূরণ করছে, আর তার পাশেই রাখা হয়েছে সিএনজি সিলিন্ডার। সিএনজি সিলিন্ডার ব্লাস্ট হলে কেউ বাঁচবে না। এটা তো মারাত্মক! কিভাবে বিআরটিএ এ সিলিন্ডার রাখে।’ এ সময় মন্ত্রী বিআরটিএর অফিসে দালালের ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘উনাদের থেকে গাড়ির ঠিকমতো ফিটনেসের সনদ কিভাবে আশা করা যায়।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বিদ্যুতের ব্যবহার করা যায়। এতে ২ বিলিয়ন ডলার বাঁচবে। কিন্তু বিআরটিএ তা অনুমোদন দেয় না। সড়কের জন্য ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি’ নেই।

প্র