Home > জাতীয় > সারাদেশ > কুয়েতের মসজিদের ইমাম স্বামী, দেশে স্ত্রীর পরকীয়ায় প্রাণ গেল মা-ভাইয়ের!

কুয়েতের মসজিদের ইমাম স্বামী, দেশে স্ত্রীর পরকীয়ায় প্রাণ গেল মা-ভাইয়ের!

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের সাখারী গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশু ও ঘাতক জাকিরের প্রেমের সম্পর্ক দেখে ফেলায় এ ট্রিপল হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত জাকির ও তার সহযোগি জুয়েলের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. এনায়েত উল্লাহ’র খাসকামরায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

এরপর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাড়ির মালিক প্রবাসী আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এই হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্তের স্বার্থে তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল।

পুলিশ জানায়, প্রায় ৩ বছর আগে জাকির ওই বাড়ির নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করার সময় কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর থেকে ওই বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিলো। তাদের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যায় প্রবাসী আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম এবং খালাতো ভাই ইউসুফ। এ কারণে তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে জাকির ও মিশু।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত শুক্রবার রাতে বাসার অন্যান্যরা ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের প্রধান দরজা খুলে রাখে মিশু। ওইদিন রাত ১১টার পর জাকির ও জুয়েল ওই বাসায় ঢুকে প্রথমে ইউসুফের পা বেঁধে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তারা পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা মরিয়ম বেগমকেও একইভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করে। দুই হত্যাকাণ্ডের পর ইউসুফের লাশ বাড়ির সামনে পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দেয় এবং মরিয়ম বেগমের লাশ কক্ষ থেকে বেলকনিতে নিয়ে রাখে।

মিশন শেষ করে তারা মিশুর কক্ষে গিয়ে মিশুর বিবস্ত্র ছবি তোলে। হত্যার ঘটনা ফাঁস করলে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয় মিশুকে। এ সময় পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা প্রবাসীর ভগ্নিপতি শফিকুল আলম ঘুমের মধ্যে কাশি দেয়। শফিকুল দুই হত্যার বিষয়টি টের পেতে পারে সন্দেহে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘাতকরা।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে ফজরের নামাজের সময় মরিয়মের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা প্রবাসী রবের ভাতিজি আছিয়া আক্তার ঘুম থেকে জেগে দাদিকে খুঁজতে গিয়ে বেলকনিতে লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেয়। প্রতিবেশীরা এসে ওই বাড়ি থেকে আরও দুটি লাশ খুঁজে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩টি লাশ উদ্ধার করে বরিশাল মর্গে প্রেরণ করে।

ময়নাতদন্ত শেষে রোববার নামাজে জানাজা শেষে তাদের মরদেহ বাড়িতে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, বরিশালের বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর এলাকার কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রব হাওলাদারের বাড়িতে শুক্রবার মধ্যরাতের পর যে কোনো সময় তিনজনকে হত্যা করা হয়। এরা হলেন, প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগম, তার বোনের ছেলে মো. ইউসুফ এবং বোন জামাই শফিকুল আলম। আব্দুর রব ১১ বছর যাবৎ কুয়েতে একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তার স্ত্রী ও সন্তান বাড়িতে থাকেন। নিহত তিনজনের মধ্যে ইউসুফ এবং শফিকুল আলম দুইদিন আগে বেড়াতে এসেছিলেন।