Home > বিশেষ সংবাদ > ‘সাঈদী হুজুর মুক্তি পাবেন এবং আবার ময়দানে নাহমাদুহু বলে ওয়াজ শুরু করবেন।’

‘সাঈদী হুজুর মুক্তি পাবেন এবং আবার ময়দানে নাহমাদুহু বলে ওয়াজ শুরু করবেন।’

‘সাঈদী হুজুর মুক্তি পাবেন এবং আবার ওয়াজের ময়দানে গিয়ে নাহমাদুহু বলে তার ওয়াজ শুরু করবেন।’ গোলাম মাওলা রনিকে এক আওয়ামীলীগ সমর্থক সাঈদী বক্তের ফোনকল।

আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমানে বিএনপি নেতা গোলাম মাওলা রনি। তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে তিনি পটুয়াখালীর স্থানীয় এক বন্ধুর ছেলের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। নিচে পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলঃ

“আজকের এই পবিত্র দিনে একটি পবিত্র স্থানে বসে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সম্পর্কে এই মাত্র আমি যা শুনলাম তাতে আমার অন্তর শীতল হয়ে গেলো ! বর্তমানে জীবিত আছেন এমন চারটি প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে ছোট প্রজন্মের মন মস্তিষ্কে জনাব সাঈদী কিভাবে ঢুকে পড়েছেন তার বাস্তব প্রমান পাওয়ার পর মনে হলো – জনাব সাঈদী হয়তো এই যুগের মুজাদ্দেদ এবং জমিনে জান্নাতি মানুষের জীবন্ত প্রতিরূপ !

উপরোক্ত বিষয়টি খুলে বলার পূর্বে প্রতি শুক্রবারে আমার জীবন যাত্রা নিয়ে কিছু বলে নেই ! দিনটিতে আমি রোজা রাখি এবং সাড়ে এগারোটার মধ্যে মসজিদে চলে আসি ! সারাদিন এই পবিত্র গৃহে থাকি এবং মাগরিব অথবা এশা পড়ে বাসায় যাই ! এই আট-নয় ঘন্টা সময়ে আমি সাধারণত কোনো ফোন রিসিভ করিনা ! কিন্তু আজ একটা ফোন কেন জানি রিসিভ করলাম !

ফোনের অপর প্রান্ত থেকে একটি ইতস্তত কণ্ঠ জানতে চাইলেন আমি গোলাম মাওলা রনি কিনা ? তার পর ফোনকর্তা তার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে জানালেন যে, তিনি নবম শ্রেণীতে পড়েন ! তার বাবার নাম কাম্বার এবং ফুফার নাম নুরুল হুদা যিনি বর্তমানের সিইসি !

কাম্বার আমার বহু পুরোনো বন্ধু ! কিন্তু গত কুড়ি বছর ধরে কোনো যোগাযোগ নেই ! কাম্বারদের পুরো পরিবার কট্টর আওয়ামীলীগ এবং তারা বেশ ধনী এবং অভিজাত ! কাম্বারের ছেলে জানালেন যে, তিনি ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র এবং আওয়ামীলীগ করেন ! নিয়মিত নামাজ পড়েন – কোরান তেলাওয়াত করেন এবং ইসলামের নিয়ম কানুন কঠোর ভাবে অনুসরণ করেন!

ভিডিওঃ  ‘আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে গোলাম মাওলা রনির চমৎকার মূল্যায়নের সেই ভিডিও! ’

[সংবাদের ভিডিওটি দেখতে প্লে ▷ বাটনে ক্লিক করুন]

আমার বন্ধু পুত্র আমাকে জানালেন যে , জনাব দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ওয়াজ শুনেই তিনি ধর্ম কর্মে একনিষ্ঠ হয়েছেন ! সম্প্রতি সাঈদী সাহেব কে নিয়ে আমার দেয়া একটি বক্তব্য তিনি ইউ টিউবে দেখার পর কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য আমাকে ফোন করেছেন !

আল্লাহর দ্বীনের অনুরক্ত সম্মানিত কিশোরটি ফোনে আমার সঙ্গে কথা শেষ করার পূর্বে কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন যে , তিনি বিশ্বাস করেন – সাঈদী হুজুর মুক্তি পাবেন এবং আবার ওয়াজের ময়দানে গিয়ে নাহমাদুহু বলে তার ওয়াজ শুরু করবেন !

ছেলেটির কথা শুনে আমি কিছুক্ষন বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম ! তারপর এই স্টেটাস লিখতে শুরু করলাম ! আল্লাহর দরবারে বন্ধু পুত্রের জন্য দোআ চাই এবং তার মনের আকুতিটি যেন কবুল হয় সেই জন্যও দোআ করছি ! আমিন !”

উৎসঃ সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে

আরও পড়ুনঃ ‌জেল থেকে আল্লামা সাঈদীঃ ’আমি আবার ফিরে আসবো কোরআনের ময়দানে। ইনশাআল্লাহ’

কারাবন্দি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাথে তার ৩য় পুত্র মাসুদ সাঈদী (ফাইল ছবি)

মাসুদ সাঈদী

“আমার বাবা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহর (আমার হৃদয়ে সঞ্চিত সবটুকুন ভালবাসা যার পবিত্র দু’পায়ে নিবেদিত) সাথে দেখা করতে আজ আমরা তার পরিবারের সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারে গিয়েছিলাম।

সাক্ষাতে জন্য আবেদন করার পর কারা কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩ ঘন্টা গেটের বাইরে বসিয়ে রেখেছিল আমাদের। আজ বৃষ্টিও হয়েছে বেশ কিছুটা সময়। বৃষ্টির মধ্যেই বসে থাকতে হয়েছে আমাদের। সকালে নাস্তা করে বেরিয়েছিলাম, এর মাঝে আর কিছুই খাওয়া হয়নি। এমনিতে আমি ডায়াবেটিসের রুগী। বেশী সময় না খেয়ে থাকলে শরীর কেঁপে ওঠে, দূর্বল লাগে। আমাদের সাথে ঘরের বাচ্চারাও থাকে, বসে থাকতে থাকতে তারাও এক সময় ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে, ছটফট করতে থাকে। এভাবে প্রায় প্রতি সাক্ষাতে আমাদেরকে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ যে কি তৃপ্তি পান তা আমার মতো অযোগ্য এক ব্যক্তির মাথায় আজো ঢুকলো না। এমন আচরণ করাটা কি ‘উপরের নির্দেশ’ নাকি তাদের চাকুরী বাঁচানো (!) না চাকুরীতে প্রমোশনের কোন ফর্মুলা (?) তা আমার জানা নেই।

অবশেষে দেখা করার ডাক এলো। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আব্বার মায়াবী চেহারাখানি দেখে মূহুর্তেই সব কষ্ট ভুলে গেলাম। দেখা করতে ঢুকেই আরেক পেরেশানীতে পরলাম। খালি হাতের ঘড়ি দেখছি। এই বুঝি কেউ একজন এসে বলবে, ‘স্যার উঠুন, আপনাদের সাক্ষাতের সময় শেষ।’ মাথার ভেতর খালি ঘুরপাক খাচ্ছে ‘৩০ মিনিট’, ‘৩০ মিনিট।’ আমাদের সাক্ষাতের সময় যে মাত্র ৩০ মিনিট !!

পরিবারের সবার সাথে আব্বা হাসি মুখে কথা বলছিলেন। আর আমি আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, এমন একজন মানুষকে কেমন করে ‘ওরা’ গত ৯টি বছর ধরে আটকে রেখেছে!! আহারে! এই মানুষটি যদি বাইরে থাকতেন, তাহলে তার তাফসীর শুনে গত ৯ বছরে অন্তত: ৯জন মানুষতো ইসলাম গ্রহন করতো, অন্তত: ৯জন মানুষতো নামাজী হতো, অন্তত: ৯জন মানুষতো সুদ ঘুষ ছেড়ে দিতো, অন্তত: ৯জন মানুষতো জেনা ব্যভিচার ছেড়ে দিতো, অন্তত: ৯জন মানুষতো কোরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মী হতো !! হায় আফসোস!

তবে আলহামদুলিল্লাহ, ৯ বছর ধরে আটকে রেখে শত মানসিক যন্ত্রনা দিয়েও আমার বাবা আল্লামা সাঈদীর মানসিক দৃঢ়তায় এক চুল পরিমানও চিড় ধরাতে পারেনি ‘ওরা।’ তিনি যেন ধৈর্যের এক পিরামিড। শত কষ্টের মাঝেও তিনি কোরআনের ময়দানে ফেরার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন।

আজো কথা প্রসংগে আবারো দৃঢ়কন্ঠে আব্বা ঘোষনা করলেন, ’আমি আবার ফিরে আসবো কোরআনের ময়দানে ইনশাআল্লাহ, কোটি জনতাকে আবার শোনাবো কোরআনের শাশ্বত বাণী, ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশেই একদিন উড়বে ইসলামের পতাকা।’

দৃপ্ত কন্ঠে আব্বার কথাগুলো শুনে আমরা চোখের পানি ফেলেছি। আর চোখের পানি দিয়ে দাড়ি ভিজিয়ে বলেছি, ‘ওগো আরশের মালিক, ওগো আহকামুল হাকিমীন! তুমি কাশিমপুর কারাগারের ছোট্ট এই রুমে বসা তোমার গোলামদের আহাজারি কবুল করো। আমাদের চোখের পানি কবুল করো। আমরা মজলুম, আমাদের হাতগুলোকে তুমি খালি হাতে ফিরিয়ে দিওনা।’

চোখের পানি শুকাতে না শুকাতে উঠে দাঁড়াতে হলো। একজন কারারক্ষী এসে জানালেন সাক্ষাতের সময় শেষ। সাক্ষাতের এই ‘৩০ মিনিট’ কি আরেকটু দীর্ঘ হতে পারতো না !! ঘড়ির কাটাটা কি আরেকটু ধীরে ঘুরতে পারতো না !!

আব্বার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে এলাম চোখ মুছতে মুছতেই, কিন্তু হৃদয়টা ভরে আছে নিদারুন এক প্রশান্তিতে। ঐ মায়াবী চেহারাটা দেখেছি যে! ঐ পবিত্র হাতে চুমু খেয়েছি যে!”

গ্রেফতারের কয়েক বছর আগে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাথে তার ৩য় পুত্র মাসুদ সাঈদী (ফাইল ছবি)

–Masood Sayedee – মাসুদ সাঈদী

পুনশ্চ ::

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানীতে আপনাদের ভালবাসার ’সাঈদী’ আপনাদের দোয়ায় ভালো আছেন।

দেশ বিদেশের যারা আব্বার কাছে সালাম জানিয়েছিলেন আপনাদের সকলের সালাম আমি তার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আব্বাও আপনাদের সকলকে সালাম জানিয়েছেন। আপনাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

আপনারা দোয়া করবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তাঁকে সুস্থ রাখেন, ভাল রাখেন। তাকে হেফাজতে রাখেন। তার নেক হায়াত দারাজ করেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ওয়াল জালাল তাকে যেন আবারো কোরআনের ময়দানে ফিরিয়ে দেন।