নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে প্রবেশের ৭টি পথের ৬টিই বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। একটি পথ খোলা থাকলেও প্রবেশমুখে পুলিশ পাহারা থাকায় পল্লিতে লোকজনের যাতায়াত একেবারেই কমে গেছে। এতে করে আয় বন্ধ হয়ে গেছে পল্লির অন্তত ৫ হাজার বাসিন্দার। খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ এ যৌনপল্লির বাসিন্দারা প্রায় তিন মাস ধরে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম মন্ডল স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগ নেতা আ. রহমান মন্ডলের কাছে পরাজিত হন। পরবর্তী সময়ে যৌনপল্লিতে আধিপত্য বিস্তারসহ নির্বাচনী বিষয় নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে সম্প্রতি পল্লিতে কয়েকটি মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু ও নির্বাচনী সহিংসতার আশঙ্কায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ পল্লিতে দফায় দফায় অভিযান চালায়। পল্লির প্রধান প্রবেশ পথ খোলা রেখে বাকি ৬টি পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। পল্লির ৬০ সদস্যের পাহারাদার দল নিষিদ্ধ করা হয়। এ পাহারাদারদের বিরুদ্ধে পল্লিতে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে পল্লির বাসিন্দারা জানান, এখানে যৌনকর্মী, তাদের সন্তান, কথিত স্বামী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কাজের মাসিসহ অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। কেবল প্রধান প্রবেশ পথ খোলা রেখে বাকি গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় পল্লির বাসিন্দাদের স্বাভাবিক চলাফেরায় খুব সমস্যা হচ্ছে। পল্লিতে গ্রাহকসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে লোকজনের আসা-যাওয়া অনেক কমে গেছে। এতে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে তারা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। যৌনকর্মীদের দাবি, নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পল্লির অন্তত আরও দুটি গেট খুলে দেওয়া হোক।
পল্লির মনেকা বাড়িওয়ালি জানান, তার বাড়িটি মেইন গেট থেকে অনেক দূরে। পাশের গেটটি বন্ধ থাকায় লোকজনের আনাগোনা একেবারেই নেই। এ অবস্থায় আয় না থাকায় মেয়েরা না খেতে পেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। যার কাছে যা সঞ্চয় বা মূল্যবান জিনিস ছিল সব বিক্রি করা হয়ে গেছে। একটু বয়স্করা উপায় না পেয়ে এখন ভিক্ষুকের মতো এর-ওর কাছে হাত পাতছেন।
পল্লির বাসিন্দা শাহনাজ আক্তার, রুমা আক্তার, সালেহা আক্তার, সুমি, নিপা, পুষ্পসহ অনেকেই বলেন, তিন মাস ধরে খুব কষ্টে আছেন তারা। বিভিন্ন সময়ে এখানে পুলিশের বড় কর্মকর্তারা এলে তাদের হাতে-পায়ে ধরেছেন। গেট খুলে দিতে বলেছেন। কাজ হয়নি। তাদের সন্তানরাও ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না।
যৌনকর্মী নেত্রী পারভীন আক্তার বলেন, পল্লির মেয়েদের নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আয়-রোজগার সচল রেখে বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়াটাও জরুরি। তিনি পল্লির প্রধান প্রবেশ পথসহ সামনের দিকের অপর দুটি পথ দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করা মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম জানান, পল্লির বাসিন্দাদের কেউ কেউ ক্ষুধার যন্ত্রণায় পল্লি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন বলে শুনেছি। পল্লির সার্বিক পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রেখেই তাদের জন্য মানবিক দিকটি বিবেচনার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আবদুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, পল্লির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বিভিন্ন অপরাধ দূর করতে পুলিশ সেখানে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পুরো বিষয় পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আছে। সেখানকার বাসিন্দারা মানবেতর অবস্থার মধ্যে থাকলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন বলে জানান ওসি।