৯০ বছর বয়সী আয়েশা বিবি মৃ’ত মোবারক হোসেনের স্ত্রী’। যশোরের অভয়নগর উপজে’লার শুভরাড়া ইউনিয়নের বাশুয়াড়ী গ্রামের বাসিন্দা এ নরী। বয়সের ভারে আর রোগে নড়বড়ে শরীর। এ বয়সে নাতি-নাতনির মাঝে দিন কা’টানোর কথা ছিল তাঁর। অথচ আট সন্তানের বৃদ্ধ মা আয়শা বেগমকে বেঁচে থাকার যু’দ্ধে প্রতিনিয়ত হাত পাততে হচ্ছে মানুষের কাছে।
ফাইল ছবি
সুস্থ্য সবল সন্তানেরা তাদের পরিবার নিয়ে বেশ আছেন। বৃদ্ধা মায়ের বোঝা টানতেই যেন শত অ’পারগতা তাদের। যে মা দশ মাস দশদিন গর্ভে ধারণ করে একে একে জন্ম দিয়েছিলেন আটটি সন্তান। সেই মাকে পেটের ক্ষুধা মেটাতে রোজ ভিক্ষার থালা হাতে নামতে হয় পথে।
সরেজমিনে উপজে’লার শুভরাড়া ইউনিয়নের বাশুয়াড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মেঝো ছেলের ঘরের পাশে খোলা আকাশের নিচে ভিক্ষা করছেন আয়শা বিবি।
আয়শা বিবির সাথে কথা হলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘টাকার অভাবে গত দুইদিন আমি ভাত খাতি পারিনি। আমা’র ছেলে-মেয়েরা খোঁজখবর রাখে না। ভিক্ষা করে যা হয় তা দিয়ে মাঝে মধ্যে খাবার কিনে খাই। আর গ্রামের কয়েকজন মাঝে মধ্যে খাবার দিলে তাই খাই।
গ্রামবাসী জানায়, তারা মাঝে মধ্যে খোঁজখবর নিলেও বৃদ্ধ মায়ের কোনো খোঁজ রাখেন না ছেলে-মেয়েরা। উনার আটটি সন্তানই জীবিত আছেন। সবাই প্রতিষ্ঠিত। তারপরও কেউ মায়ের খবর রাখেন না। এটা দুঃখ ও ক’ষ্টের বিষয়।
নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেশী এক গৃহিনী জানান, মেঝে ছেলে খাবার খেয়ে মায়ের সামনে দিয়ে চলে গেলেও একটি বারের জন্য বৃদ্ধ মাকে খেতে বলে না। এমন সন্তানের থেকে সন্তান না থাকা ভালো।
অনেক খোঁজ করে পাওয়া যায় আয়শা বিবির মেঝ ছেলে লুৎফর রহমানকে। বৃদ্ধ মা এর সাথে এমন আচরণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাকে খেতে দিলে কোনো সুনাম করেন না। তাই এখন আর খেতে দেয় না। খাবার দিলেও তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করেন। তারপর সবকিছু ভুলে গিয়ে তিনি উপস্থিত সকলের নিকট ক্ষমা চেয়ে মাকে ঘরে তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং অন্যান্য ভাই-বোনকে মায়ের প্রতি খেয়াল রাখার কথা বলবেন বলে আশ্বা’স দেন।
এ ব্যাপারে উপজে’লা নির্বাহী কর্মক’র্তা মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন বলেন, বিষয়টি আমা’র জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। বৃদ্ধ আয়শা বিবির ভালো থাকার ব্যবস্থাসহ উনার সন্তানদের বি’রুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।