Home > জাতীয় > সারাদেশ > শিবগঞ্জে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আম খাতের ভূমিকা নিয়ে ক্যাম্পেইন

শিবগঞ্জে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আম খাতের ভূমিকা নিয়ে ক্যাম্পেইন

স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন (এলইডি) মডেল এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আম খাতের ভূমিকা শীর্ষক আঞ্চলিক প্রচারণার আয়োজন করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভা।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিনব্যাপী উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উদ্ভাবনী কৃষি পদ্ধতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। এই আয়োজনটিতে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন (প্রবৃদ্ধি) প্রকল্প যা অর্থায়ন করেছে সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকার, বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সুইসকন্ট্যাক্ট।

আম ব্যবসাকেন্দ্রিক ৯টি পৌরসভা উক্ত আয়োজনে অংশ নেয়। তারা শিবগঞ্জের আম খাতকে এগিয়ে নেয়ার বিভিন্ন সেরা অনুশীলন (বেস্ট প্র্যাকটিস) সম্পর্কে জেনেছে এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর ভূমিকা অনুধাবন করেছে। পাশাপাশি, পৌরসভাগুলোর সেবার মান উন্নত করার গুরুত্ব ও করণীয় সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছে।

এ প্রচারণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিবগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মো. আজাহার আলী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সামাদ, সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশের হেড অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আলমগীর কবির, ড. মো. মোখলেসুর রহমান, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত ও গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

এতে বক্তারা বলেন, অতি ঘন পদ্ধতিতে আমচাষ (ইউএইচডি) প্রযুক্তি গ্রহণ করার ফলে আম উৎপাদনে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন এসেছে, যা সারা বছরব্যাপী পাওয়া যায়। এই জাতের আম উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে বলে জানায় তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন- প্রবৃদ্ধি প্রকল্প শিবগঞ্জে একটি সফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে আমরা দেখেছি কীভাবে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। এরকম একটি সময়োপযোগী উপস্থাপনা বৃহত্তর পরিসরে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করবে।’

শিবগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক আজাহার আলী বলেন, ‘আজকের এই আঞ্চলিক ক্যাম্পেইনটি শিবগঞ্জের স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে চলমান প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাজার উন্নয়ন ও প্রযুক্তি প্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে এটি অন্যান্য পৌরসভাকে পথ দেখাতে পারে।’

স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন (এলইডি) সেমিনারে বাংলা এলইডি মডেল এবং শিবগঞ্জ পৌরসভার সফল বাস্তবায়ন ও শিখন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সেমিনারে পাবলিক-প্রাইভেট সংলাপের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ সমাধানের গুরুত্বের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। গত কয়েক বছরে পাবলিক-প্রাইভেট স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ধারাবাহিক সংলাপের ফলে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আম বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরন উন্নত ব্যবসায়িক পরিষেবা, শক্তিশালী ই-কমার্স ও এফ-কমার্স সক্ষমতা, ডিজিটাল ট্রেড লাইসেন্সিং ব্যবস্থা, হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে রাজস্ব আদায় এবং কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘সঠিকভাবে অতিঘন প্রযুক্তি (ইউএইচডি) ব্যবহার করে আম উৎপাদনে শিবগঞ্জ যে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি, সঠিক বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া শিবগঞ্জে শুরু হয়েছে, যা সারা বছর আম রফতানির সুযোগ তৈরি করবে এবং রফতানি ব্যবস্থার বিস্তার ঘটাবে। আমার আশা, শিবগঞ্জ থেকে এই প্রযুক্তি আরও বিস্তৃত হবে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন শিবগঞ্জের মডেলের ওপর ভিত্তি করে ইউএইচডি প্রযুক্তি গ্রহণের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করতে আটটি পৌরসভার ওপর তার মাঠ পর্যায়ের গবেষণা উপস্থাপন করেন। তিনি এই চ্যালেঞ্জগুলোর বাস্তব সমাধানের সুপারিশ করেন এবং আম উৎপাদন ও শীর্ষ-কার্যকর প্রযুক্তির জন্য ‘গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস’ (জিএপি) তুলে ধরেন। তার উপস্থাপনায় উচ্চ ফলন অর্জন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও রফতানি মান পূরণের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়।

স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সেমিনারের পাশাপাশি আম সংক্রান্ত বাণিজ্য মেলা, বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় আম উৎপাদনকারীদের সংলাপ (বিটুবি), স্থানীয় অর্থনৈতিক উনয়নের উপরে গম্ভীরা (ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় নাটক) এবং নারী উদ্যোক্তা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বেশ কিছু প্রতিযোগিতার আয়োজনও ছিল। স্বপ্ন, প্রাণ ফুডস, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, মেরিডিয়ান গ্রুপ ও চাঁপাই অ্যাগ্রো ফুড গ্রুপের মতো নেতৃস্থানীয় কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিটুবি আলোচনায় অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ইউএইচডি ও টপ-ওয়ার্কিং (ডাল কেটে উন্নত জাতের আমে পরিবর্তন) শীর্ষ-উৎপাদিত আমের খামারগুলো ঘুরে দেখেন।

ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স সংগ্রহ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে নাগরিক-বান্ধব শাসনের প্রতি পৌরসভার অঙ্গীকার তুলে ধরেন শিবগঞ্জের প্রশাসক আজাহার আলম। তিনি বলেন, শিবগঞ্জবাসীর ক্ষমতায়নের জন্য পৌর উদ্ভাবনের সঙ্গে কৃষির উৎকর্ষকে একীভূত করার জন্য এটি একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে।

সুইসকন্ট্যাক্টের বাংলাদেশের হেড অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন আলমগীর কবির উল্লেখ করেন, ২০১৮ সাল থেকে প্রবৃদ্ধি শিবগঞ্জ পৌরসভার সাথে কাজ করে। তাদের স্থানীয় উদ্যোগ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা উন্নত করার জন্য কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে শিবগঞ্জ স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে সফল হয়েছে। আমরা আশা করব, একই মডেল অনুসরণ করে অন্যান্য পৌরসভাগুলোও যেন এগিয়ে যেতে পারে।

প্রচারণা বিষয়ক এ অনুষ্ঠানে সহস্রাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন: শিবগঞ্জ, বাঘা, গোদাগাড়ী, নাচোল, মুন্ডুমালা, নওহাটা, চারঘাট, পুঠিয়া এবং সাতক্ষীরা থেকে আগত বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধি, সম্ভাবনাময় আমচাষী, উদ্যোক্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এবং বিডা ও বারির ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা।