Home > বিশেষ সংবাদ > কম বয়সেই বিশ্ব কাঁপাচ্ছেন যে রাষ্ট্রনায়কেরা

কম বয়সেই বিশ্ব কাঁপাচ্ছেন যে রাষ্ট্রনায়কেরা

যিনি দেশ পরিচালনা করবেন তাকে হতে হবে প্রবীণ, থাকতে হবে মাথা ভর্তি পাকা চুল। একসময় রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে আমাদের ভাবনা ছিল এমনই। ধরেই নেওয়া হতো যে, যাদের বয়স কম তারা কিছু জানে না, বোঝে না। দেশ পরিচালনার কাজ তাদের দিয়ে হবে না। অথচ বর্তমান বিশ্বে দেখা যাচ্ছে, গণতান্ত্রিকভাবেই উঠে আসছেন তরুণ সব নেতা। বিপুল জনপ্রিয়তাও পাচ্ছেন তারা। আর দেশ পরিচালনায় সাফল্যের কথাই যদি ধরা হয়, সেখানেও প্রবীণ নেতাদের হার মানাচ্ছেন তারা।

জাস্টিন ট্রুডো (কানাডা)

জাস্টিন ট্রুডোর কথাই ধরা যাক। টানা দ্বিতীয় বারের মতো কানাডার সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হলেন তিনি। প্রথম মেয়াদে ট্রুডো যখন ক্ষমতায় বসেছিলেন তখন তার বয়স ছিল মোটে ৪২। এই বয়সেই সাহসী সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। গাঁজার বৈধতা দিয়েছেন। সারা বিশ্বেই যখন ‘অভিবাসী এবং মুসলিম খেদাও’ মনোভাব তৈরি হচ্ছে, তখনও ট্রুডো নিজ দেশের উদার ইমেজ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

আবি আহমেদ (ইথিওপিয়া)

বর্তমান বিশ্বের আরেক তরুণ রাষ্ট্রনায়ক ইথিওপিয়ার আবি আহমেদ। শান্তিতে নোবেল জিতে এবার সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ট্রুডোর মতোই তিনি যখন ক্ষমতায় বসেছিলেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৪২। নিজ দেশে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা তো রয়েছেই, কিন্তু সেটাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বিষয়। তা হলো, আবির হাত ধরেই দারিদ্রপীড়িত ইথিওপিয়াকে নতুন করে চিনছে বিশ্ব। ইথিওপিয়া বলতেই আগে সবার ভাবনায় চলে আসতো একটা অস্থিতিশীল দেশের ছবি। যেখানে আছে কেবল হানাহানি মারামারি। সভ্যতার লেশমাত্র নেই সেখানে। আবি আহমেদ ইথিওপিয়াকে নিয়ে এই ভাবনাগুলোই আমূল পাল্টে দিচ্ছেন।

জাসিন্ডা আর্ডার্ন (নিউজিল্যান্ড)

নিউজিল্যান্ডের জাসিন্ডা আর্ডার্ন জাস্টিন ট্রুডো এবং আবি আহমেদের র থেকে কয়েক ধাপ নীচে। মানে, তার বয়স এখনও ৪০-ই হয়নি। ২০১৭ সালে যখন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তখন তার বয়স ছিল মোটে ৩৭। অনেকটা নিভৃতচারীই ছিলেন তিনি। বিশ্ব গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে আলোচনা হতো সামান্যই। কিন্তু গত মার্চে নিউজিল্যান্ডে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর এক অন্য জাসিন্ডাকে দেখলো বিশ্ব। হামলায় হতাহতদের পরিবারগুলোর পাশে যেভাবে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন তা এক কথায় অনন্য। এছাড়া ওই হামলার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন এনে মানবিকতার পাশাপাশি নিজের দৃঢ়তারও প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।

ইমানুয়েল ম্যাখোঁ (ফ্রান্স)

ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট পদে প্রধান দুই দলের আধিপত্য চলে আসছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে সেই ধারা ভেঙে দিয়ে ইতিহাস রচনা করেন মাত্র ৩৯ বছরের তরুণ ইমানুয়েল ম্যাখোঁ।  মধ্যপন্থী ম্যাখোঁ বর্তমানে বেশ চাপের মুখে রয়েছেন। দেশে বড়সড় বিক্ষোভ সামলাতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু তবুও স্বদেশ এবং বিশ্ব রাজনীতি দুই ক্ষেত্রেই তার দৃঢ় নেতৃত্ব প্রশংসার দাবি রাখে। বিশ্বের শক্তিশালী সব দেশে যখন রাষ্ট্রনায়করা জনপ্রিয়তা পেতে কট্টর জাতীয়তাবাদের ধোঁয়া তুলছেন, ম্যাখোঁ তখন স্পষ্টভাবেই বলছেন তিনি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী।

ভ্লাদিমির জেলেনস্কি (ইউক্রেন)

একটি টিভি সিরিজ়ে প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘সারভেন্ট অব দ্য পিপল’ নামে সেই সিরিজ় গোটা দেশে তুমুল জনপ্রিয়তা দিয়েছিল তাকে। সেই টিভি সিরিজের কাহিনীকেই বাস্তব জীবনে টেনে এনেছেন ইউক্রেনের ভ্লাদিমির জেলেনস্কট। রাজনীতিতে তেমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই। বয়সও মাত্র ৪১। তাতে কী! ইউক্রেনের ৭৩ শতাংশ মানুষ জেলেনস্কিকেই দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তরুণ এই নেতা মাত্র কয়েক মাস হলো দেশ পরিচালনায় এসেছেন। এরমধ্যেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন পুতুল প্রেসিডেন্ট তিনি নন। ভয়ডরের তোয়াক্কা না করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পর্যন্ত তিনি ধমকে দিয়েছেন। এ মাসেই ট্রাম্পের সঙ্গে তার ফোনালাপ হয়। সে সময় ট্রাম্পের একটি মন্তব্য প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবেই জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের ব্যাপারে সমঝে কথা বলুন। ইউক্রেনের জনগণকে ঢালাওভাবে আমার দেশের জনগণকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলা থেকে বিরত থাকুন।’

ক্ষমতায় এসে যুগান্তকারী আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলেনস্কি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস কক্ষে প্রেসিডেন্টের ছবি ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম বাতিল করেছেন। প্রেসিডেন্টের ছবির জায়গায় তাদের সন্তানদের ছবি রাখতে বলেছেন জেলেনস্কি।

এরা ছাড়াও বর্তমান বিশ্বে আরও অনেক রাষ্ট্রনায়ক আছেন যারা চল্লিশের কোঠায় বা তার চেয়েও কম বয়সে গণতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচনে জিতে সাফল্যের সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন। প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ সব নেতাদেরও ম্লান করে দিচ্ছেন।