Home > আন্তর্জাতিক > নিজের মেয়ের ধর্ষণকারীদের যেভাবে হত্যা করেছিলেন এই মা

নিজের মেয়ের ধর্ষণকারীদের যেভাবে হত্যা করেছিলেন এই মা

মাঝরাতে হঠাত মায়ের ফোনটি বেজে ওঠে। অজানা আশংকায় যখন মা ফোন ধরলেন, ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসলো মেয়ে সিফোকাজির কণ্ঠ। মেয়ে কাতর হয়ে জানালো তার সর্বনাশ হয়ে গেছে। তিনজন ধ’র্ষক মিলে তার জীবনে নামিয়েছে বিভীষিকার রাত্রি। মা নকুবঙ্গা কাম্পি খবরটা শুনে থ! এত রাত! সময় ২০১৭ সালের আগস্ট মাস।

দক্ষিণ আফ্রিকার এক প্রত্যন্ত গ্রাম ইস্টার্ন কেইপ। সেই প্রদেশের এক গ্রাম যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে তার মেয়ের সঙ্গে। তিনি এখন সেই জায়গা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে অবস্থান করছেন। এই অন্ধকার রাত্রিতে মা সাহায্য চাইলেন পু’লিশ বাহিনীর। যদিও তিনি জানেন, ওই প্রত্যন্ত গ্রামে পু’লিশের পৌঁছাতে ঢের দেরি হবে। তবুও চেষ্টা করলেন। কিন্তু সাড়া মিললো না পু’লিশের।

নকুবঙ্গা দিশেহারা হয়ে পড়লেন। তার মনের মধ্যে আরো খা’রাপ কিছু ঘটবার পূর্বাভাস। মেয়েকে যে তিনি ধ’র্ষক নি’র্মমভাবে ক’ষ্ট দিয়েছে, মেয়ে তাদের প্রত্যেককেই চিনে। দ্রুত কিছু করতে পারলে হয়ত সেই ধ’র্ষকের দলটিকে ধ’রা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে তার মনে হচ্ছে, মেয়েকে যদি জানেই মে’রে ফেলে ওরা। মেয়ে যাতে কাউকে অ’ভিযোগ না দিতে পারে এইজন্যে যদি ধ’র্ষকরা তার মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিতে চায়! নকুবঙ্গা এই রাতের বেলা ঝুঁ’কি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, এখু’নি যাবেন সেই গ্রামে। তিনি তো মা, তিনি তো নারী। তিনি জানেন কি ক’ষ্টই না পেয়েছে মেয়েটা। তিনি জানেন, মেয়ের পাশে আর কেউ না দাঁড়ালেও এখন তাকেই দাঁড়াতে হবে। তিনি বেরিয়ে পড়লেন ঘর থেকে।

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, মেয়েটা এত রাতে কেন ওমন প্রত্যন্ত গ্রামে গেল! কেন সে একজায়গায়, মা আরেকজায়গায়। উত্তর হলো মেয়েটি সেদিন সেই গ্রামের একটি বাড়িতে বেড়াতে যায়। মেয়েটির সঙ্গে তার কয়েকজন বন্ধুও ছিলেন। রাতে তারা সেই বাড়িতেই থাকেন। কিন্তু, রাত বাড়তে বন্ধুরা বাড়ির বাইরে যায়। মেয়েটি ঘুমাচ্ছিলো বলে সে রয়ে গেছে ঘরের মধ্যেই। গভীর রাতে পাশের এক বাড়ি থেকে তিনজন মাতাল এসে মেয়েটিকে আক্রমণ করে বসে। তারা জো’রজবরদস্তি করতে থাকে। তিনজনের কুতসিত লালসার শিকার হয় মেয়েটি।

যাইহোক, মেয়ের ফোন পেয়ে নকুবঙ্গা যখন বেরুলেন, তিনি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে নিজের সাথে নিলেন একটা ছু’রি। তার ধারণা হলো, এত রাতে হেঁটে যেহেতু যেতে হবে সেখানে তাই এটা বেয়াহ ঝুঁ’কির হয়ে যায়। এজন্যেই ছু’রিটা সঙ্গে নিয়েছিলেন তিনি। অন্ধকার পথে ফোনের টর্চ জ্বেলে নকুবঙ্গা যাচ্ছেন মেয়ের কাছে।

অদ্ভুত কা’ন্ড। নকুবঙ্গা যখন সেই বাড়িটির কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন, তিনি শুনতে পেলেন মেয়ের চি’ৎকার। মানে হলো, ধ’র্ষকের দল আবারো তার মেয়েকে আক্রমণ করছে। নকুবঙ্গা নিজের চোখে এমন দৃশ্য দেখবেন তা হয়ত এই জনমে আশা করেননি। তিনজন ধ’র্ষকের দল একটা ঘরে, সেখানে তার নিজের মেয়ের উপর তারা নি’র্যাতন করছে। একজন মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ধ’র্ষণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাকি দুইজন দাঁড়িয়ে আছে পাশে। নিজ চোখে নিজের মেয়েকে ধ’র্ষিত হতে দেখা পৃথিবীর যেকোনো মায়ের জন্য সবচেয়ে নি’র্মম একটি দৃশ্য।

মেয়ে ও মা
নকুবঙ্গা জিজ্ঞেস করলেন, কি হচ্ছে কি এখানে! ধ’র্ষকের দল একটু ভ্যাবাচ্যাকা হয়ত খেয়েছে কিন্তু পরক্ষণে তারা নকুবঙ্গাকে হা’মলা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। তখন নকুবঙ্গার মনে কি উথাল পাথাল ভয় মিশ্রিত অনুভূতির দোলাচল চলছিলো তা বুঝতেই পারছেন। মেয়ের ধ’র্ষকদের প্রতি তীব্র ঘৃ’ণা এবং ক্রোধে তার বুক ফেটে যাচ্ছিলো। সেই ধ’র্ষকের দল যখন তাকে আক্রমণ করতে এসেছে, তিনি জানেন এখান থেকে তার এবং তার মেয়ের কারোই বেঁচে ফেরার পথ নেই।

আইন, সমাজ, মানবাধিকার, ধ’র্ম- কোনো কিছু কি সেই মুহুর্তে মাতাল ধ’র্ষকদের থামাতে পারত তাদের থামাতে ব্যবহার করতে হয়েছে ছু’রির। সর্বশক্তি দিয়ে নকুবঙ্গা ছু’রি চালিয়ে থামিয়েছেন নৃ’শংসতার… নকুবঙ্গার ছু’রির থাবা তিন ধ’র্ষকের গায়েই লাগে। তার মধ্যে একজন মা’রা যায়। যদিও, নকুবঙ্গা ধ’র্ষকদের পরিণতি কি হলো সেটার দেখার জন্যে বসে ছিলেন না ঘটনাস্থলে। কাছেই এক বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে চলে যান।

পু’লিশ অবশ্য খুব তৎপরতা দেখিয়ে নকুবঙ্গাকে সেখান থেকেই আ’ট’ক করে। তাকে বন্দী করে রাখা হয় জে’লে। মায়ের মন বলে কথা। নিজে জে’লে আছেন এটার চেয়েও তাকে ভাবাচ্ছিলো মেয়ের কি অবস্থা সেটা। জে’লে বসে মেয়ের কোনো খোঁজই পাচ্ছিলেন না তিনি। আর এদিকে মেয়ে সিফোকাজিকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সে আবার তার নিজের অবস্থার চেয়ে মাকে নিয়েই বেশি উৎকন্ঠায় ছিলো। সে অস্থির হয়ে পড়েছিলো এই ভেবে মায়ের যদি কারাবাস হয়। সে ঠিক করেছে এমন কিছু হলে সেও জে’ল খাটবে। দুইদিন পর অবশ্য নকুবঙ্গাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। মা মেয়ের দেখা হয় হাসপাতালে।

নকুবঙ্গার বি’রুদ্ধে খু’নের অ’ভিযোগ আনার খবরে অবশ্য চটে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার লোকজন। তারা নকুবঙ্গার সাহসী ভূমিকাতে কোনো দোষ দেখে না। নকুবঙ্গাকে মিডিয়া ‘লায়ন মামা’ বা সিংহ মা বলে অ’ভিহিত করে। নকুবঙ্গা যেভাবে নিজের মেয়েকে বাঁ’চাতে এমন কাজ করলেন তার সঙ্গে তারা তুলনা দিয়েছেন একজন সিংহের যে কিনা নিজের শাবককে বাঁ’চাতে যা ইচ্ছা করতে পারে। নকুবঙ্গা এবং তার মেয়ের এই ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকানদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই দেশটিতে এমনিতেই প্রচুর ধ’র্ষণের ঘটনা ঘটে। দিনে গড়ে ১১০টির মতো ধ’র্ষণের ঘটনা ঘটে সেখানে। কিন্তু, নকুবঙ্গার মতো সাহসী ভূমিকা দেখা যায়না কালেভদ্রেও।

তাই, নকুবঙ্গার পক্ষে আইনি সহায়তা এবং তার পক্ষে ল’ড়ার জন্য কিছু দক্ষিণ আফ্রিকান অর্থ সংগ্রহে নেমে পড়েন। এই ঘটনা আ’লোচিত হলে বাড়তে থাকে নকুবঙ্গার প্রতি সম’র্থনও। যেদিন আ’দালতে যাওয়ার সময়, সেদিন নকুবঙ্গা ভয়ে ভয়ে ছিলেন। কিন্তু গিয়ে দেখলেন, সেখানে সারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জড়ো হয়েছে অনেক মানুষ। সেদিন নকুবঙ্গার বি’রুদ্ধে খু’নের অ’ভিযোগ থেকেও তাকে রেহাই দেয়া হয়। মেয়ে সিফোকাজির মুখে সেদিন অনেকদিন পর হাসি ফুটেছিল। তার সিংহ মাকে জে’লে যেতে হয়নি, এই আনন্দে অনেকদিন পর মুখে হাসি ফুটেছিল তার…