Home > বিশেষ সংবাদ > ৩ কোটি টাকার মেশিন ১০ কোটিতে ক্রয়

৩ কোটি টাকার মেশিন ১০ কোটিতে ক্রয়

দুই কোটি ৮০ লাখ টাকার এমআরআই মেশিন কেনা হয়েছে ১০ কোটি টাকায়। একইভাবে ৯৮ লাখ টাকা দামের চারটি কালার ড্রপলার কেনা হয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। এভাবে অন্যান্য যন্ত্রপাতিরও বাজারমূল্যের সঙ্গে দেখানো ক্রয়মূল্যের বিস্তর তফাৎ পাওয়ার পর চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন চিকিৎসক সরফরাজ খান চৌধুরীসহ চার চিকিৎসক ও তিন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যন্ত্রপাতি কেনার নামে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছে।

গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এ মামলাটি দায়ের করেন ঢাকার দুদকের সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

আসামিরা হলেন-চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ও বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক সরফরাজ খান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বাজারদর কমিটির সভাপতি ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) চিকিৎসক মো. আবদুর রব, একই হাসপাতালের বাজারদর কমিটির সদস্য ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থ্রো-সার্জারি) চিকিৎসক মো. মইনউদ্দিন মজুমদার, বাজারদর কমিটির সদস্য সচিব ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) চিকিৎসক বিজনকুমার নাথ, যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকার, মেসার্স আহম্মদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সী ফারুক হোসেন এবং এএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফতাব আহমেদ।

জানা যায়, চিকিৎসক সরফরাজ খান চৌধুরী চাকরিজীবনে ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অবসরে যান তিনি। তার শেষ কর্মস্থল ছিল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। যখন যে জেলায় সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালন করেন, তখন সেই জেলার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন তিনি।

২০১৭ সালে তিন জেলায় দায়িত্ব পালনের সময় সরফরাজের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০২ টাকার অডিট আপত্তি তোলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি তদন্ত করতে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করেছিল। ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার এমআরআই মেশিন কেনা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকায়। একইভাবে ৯৮ লাখ টাকার চারটি কালার ড্রপলার কেনা হয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য জার্মানির একটি ব্লাড ওয়ার্মার মেশিন কেনা হয় ৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায়। বাজারে এ ধরনের মেশিনের মূল্য ১৫ হাজার টাকা। কান পরীক্ষার জন্য অটোস্কোপ মেশিনের বাজারে দাম সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু হাসপাতালে অটোস্কোপ মেশিন সরবরাহ করা হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায়।

চিকিৎসক সরফরাজ খান চৌধুরী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালে (২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬) প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ৮৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্র কেনার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। হাসপাতালের ভারী যন্ত্রপাতি কেনার সময় উচ্চমূল্যের কারণে সরকারের ৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯১০ টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন থাকাকালে (২০১৩-১৫) নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সরঞ্জাম কেনায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ছাড়পত্র নবায়ন ফির ওপর ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকার ভ্যাট আদায় না করার আপত্তি তোলা হয়।

চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এর উপপরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন বলেন, সরফরাজ খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২টি ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৯ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সব যন্ত্রপাতির বাজারমূল্যের সঙ্গে দেখানো ক্রয়মূল্যের বিস্তর তফাৎ পায় দুদক তদন্ত দল। এ ঘটনায় তিনি ছাড়াও তার সহযোগী তিন চিকিৎসক ও চার ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরফরাজ খান চৌধুরীসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে খুব দ্রুত অভিযান চালানো হবে।