Home > আন্তর্জাতিক > জীবিত মুসলিমদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করছে চীন

জীবিত মুসলিমদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করছে চীন

বিশ্ববাজারে চীনাদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব। সুঁই থেকে নিয়ে জাহাজ পর্যন্ত সবই বানায় তারা। এবার সেই চীন বিশ্ববাজারে এক নতুন আইটেম পরিচিত করিয়েছে, সেটা হলো মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। আর এই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হলো চীনের নি’পীড়িত মু’সলিম’দের। কোনো মৃ’ত মানুষের অঙ্গ নয়; বরং জলজ্যান্ত একজন মানুষের শরীর থেকে কে’টে কে’টে আলাদা করা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। কারও গুর্দা, কলিজা, কারও হৃৎপিণ্ড। হ্যাঁ, এটা কোনো কল্পকাহিনি নয়, কোনো মু’সলিম সংগঠনের দাবিও নয়; বরং জাতিসংঘের স্বীকারোক্তি। একটি ভয়ংকর সত্য; চূড়ান্ত পর্যায়ের অসভ্যতা, যা গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। মানবতা আজ স্তম্ভিত। অবিশ্বা’স্য হলেও এটাই চরম সত্য।

এতদিন চীনে উইঘুর মু’সলিম’দের নি’পীড়নের ভয়ানক কাহিনির কথা বিশ্বব্যাপী আ’লোচিত বিষয়। এবার এই স্ক্যান্ডাল আরেকবার দুনিয়াকে নাড়া দিয়েছে, আসলে চীনে হচ্ছেটা কী’! জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জীবিত মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কে’টে কে’টে বিক্রি করা হচ্ছে। চীনে মু’সলিম সংখ্যালঘুদের গণহ’ত্যা করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চীন আবার বিভিন্ন মু’সলিম দেশকে ‘উপহার’ পাঠাচ্ছে। দুঃখের বিষয় হলো, চীনের এই বর্বরতা নিয়ে সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তানসহ কোনো মু’সলিম দেশই কথা বলছে না। চীনের সঙ্গে তথাকথিত সুস’ম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা সবাই নীরব।

কী’ আছে রিপোর্টে?
মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী হামিদ সাইবি চীনা মু’সলিম’দের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কা’টার বিষয়টি নিয়ে পরিচালিত স্বাধীন ট্রাইব্যুনালের একটি প্রতিবেদন জেনেভা কাউন্সিলের হেড কোয়ার্টারে দাখিল করেছেন। এই ট্রাইব্যুনালের নাম দেওয়া হয়েছে ‘চায়না ট্রাইব্যুনাল’। সেই প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, চীন গত ২০ বছর ধরে এভাবে মু’সলিম সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কে’টে নিয়ে যাচ্ছে; যা আজও অব্যাহত আছে। মু’সলিম’দের ব’ন্দিদের জীবিত অবস্থায় তাদের শরীর থেকে কলিজা, হৃৎপি-, চোখের পর্দা এমনকি শরীরের চামড়া পর্যন্ত কে’টে বিক্রি করে আসছে। সংখ্যালঘু উইঘুর মু’সলিম’দের পাশাপাশি তিব্বতি এবং খ্রিষ্টানদের কোনো কোনো সম্প্রদায়ের সঙ্গেও একই ধরনের আচরণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সিনকিয়াংয়ে ১০ লাখের বেশি উইঘুর মু’সলিমকে নজরব’ন্দি করে রাখা হয়েছে। জাতিসংঘসহ সারা বিশ্ব এর নিন্দা জানিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল প্রমাণ পেয়েছে, উইঘুর মু’সলিম’রা ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেকোনো সময় যে কারও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কে’টে নিচ্ছে।

এবার অস্বীকার করতে পারবে না চীন
আগে উইঘুর মু’সলিম’দের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই দাবি করা হতো। উইঘুর মু’সলিম’দের মধ্যে যারা সিনকিয়াং থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হতো তাদের কাহিনি সামনে আসত। ফলে এটা সবাই বিশ্বা’স করতো না। কিন্তু এবার তো জাতিসংঘের একটি স্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এ ব্যাপারে প্রমাণ পেয়েছে। যদিও চীন সরকার বারবার দাবি করছে, তারা এই ধরনের নি’র্মম অঙ্গহানির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ২০১৫ সাল থেকে তারা মৃ’ত্যুদ- পাওয়া কয়েদিদের শরীর থেকে অঙ্গহানির প্রবণতা বন্ধ করে দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, তারা স্বীকার করে নিচ্ছে এমনটা করা হতো। ‘চায়না ট্রাইব্যুনালের’ তথ্যমতে, এসব অঙ্গ দ্বারা চীন যে ‘অঙ্গ প্রতিস্থাপন শিল্প’ গড়ে তুলেছে তা থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলার আয় হয়।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সমৃদ্ধ হওয়ায় এখন ইতালি, স্পেন, ইসরাইল ও তাইওয়ান বিভিন্ন সার্জারির জন্য চীনের দ্বারস্থ হচ্ছে। ‘চায়না ট্রাইব্যুনালে’ সহযোগিতাকারী ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আইটিএসি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নামে চীনের এমন বর্বরতার বি’রুদ্ধে জনমত গঠন করছে। তারা আশা করছে, জাতিসংঘের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে চীনকে এই অ’পকর্ম থেকে বিরত রাখতে তারা সক্ষম হবে।

আইনজীবী হামিদ সাইবি মনে করেন, টার্গেট করে একটি সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা করছে চীন। তিনি এটাকে ইহুদিদের বি’রুদ্ধে হিটলারের বর্বরতা, কমিউনিস্ট আ’ন্দোলন কিংবা রুয়ান্ডা গণহ’ত্যা থেকে কোনো অংশেই কম মনে করেন না। এটাকে তিনি ‘মানবতাবিরোধী মহাঅ’প’রাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

কাহিনি আরও আছে
শুধু জীবিত মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কে’টে নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এই বর্বরতা। চীনে মু’সলিম নারীদের কারাগারে কিংবা ক্যাম্পে ব’ন্দি রেখে প্রজনন ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে। ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়া এক নারী বলেন, একটি ছিদ্র দিয়ে আমাদের বাহু বের করা হতো এবং সেখানে টিকা দেওয়া হতো। সেই টিকা দেওয়ার পর আমাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। ওই নারী সিনকিয়াংয়ে বানানো একটি ক্যাম্পে এক বছরের বেশি সময় কাটিয়েছেন। তিনি বর্তমানে আমেরিকায় শরণার্থী হিসেবে থাকছেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালে যখন তিনি ওই ক্যাম্পে ছিলেন সেখানে তার শরীরে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হয় এবং টিকা দেওয়া হয়। তিনি জানান, টিকা দেওয়ার পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত নিজেকে ভারসাম্যহীন বলে অনুভূত হচ্ছিল। সেই সময়ের কোনো কিছুই তার মনে পড়ে না। এর চার মাস পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। আমেরিকার চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি সন্তান জন্ম দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

লজ্জা পাওয়া উচিত মু’সলিম বিশ্বের
চীনে উইঘুর মু’সলিম হোক অথবা হুই সবাই নি’পীড়নের শিকার। তাদের ওপর এমন নি’পীড়ন চলে যা কল্পনাও করা মুশকিল। বিগত দিনে জাতিসংঘের ২২টি সদস্য রাষ্ট্র চীনে উইঘুর মু’সলিম’দের গ্রে’প্তার-নি’পীড়ন বন্ধের দাবি তুলেছিল। ওইসব রাষ্ট্রের দূতদের পক্ষ থেকে লেখা এক পত্রে এই সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পাঁয়তারার আশ’ঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ছাড়াও কানাডা, জা’পান ও অস্ট্রেলিয়া ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চীনের তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্রগুলো সামনে চলে আসে। ২৭টি রাষ্ট্র চীনের পক্ষে সাফাই গায়। লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে, এই তালিকায় সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মতো মু’সলিম দেশও আছে।

এ কারণেই এবার যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইম’রান খান জাতিসংঘে কাশ্মীরের ইস্যুতে জো’রালো অবস্থান নেন তখন আমেরিকা প্রশ্ন তুলেছিল ইম’রান খান চীনের মু’সলিম’দের ব্যাপারে কোনো কথা বলেন না কেন? যে চীন ১০ লাখ মু’সলিমকে ব’ন্দি করে রেখেছে তাদের ব্যাপারে কেন মুখ খোলেন না! কিন্তু এই প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। কারণ পাকিস্তানের স্বার্থ জড়িয়ে আছে চীনের সঙ্গে। এজন্য কাশ্মীরিদের নিয়ে মায়াকা’ন্না করা পাকিস্তান উইঘুর মু’সলিম’দের নিয়ে কোনো টুঁ-শব্দও করে না। এটাই মু’সলিম জাতির ট্রাজেডি!