Home > ধর্ম > মসজিদের নিচতলায় জায়গা রেখে ওপরতলায় নামাজ পড়া যাবে?

মসজিদের নিচতলায় জায়গা রেখে ওপরতলায় নামাজ পড়া যাবে?

মসজিদ আল্লাহ তায়ালার ঘর। দিনে পাঁচবার মসজিদে উপস্থিত হন আল্লাহভীরু মুসলমানরা। মসজিদে এসে মহান রবের সামনে নিজেকে সঁপে দেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য তো মসজিদে আসতেই হয়।

নামাজ আদায় ছাড়াও দীর্ঘ সময় মসজিদে অবস্থানের বিশেষ ফজিলত ও সওয়াব রয়েছে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যতক্ষণ মসজিদে সালাত ও জিকিরেরত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাঁর প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তার পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০০)

যে বান্দা অধিক সময় মসজিদে অবস্থান করে তাকে নিয়ে আল্লাহ তায়ালা গর্ব করেন। হজরত আবদুর রহমান বিন আমর (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। তারপর যার চলে যাওয়ার চলে গেল এবং যার থেকে যাওয়ার থেকে গেল।

রাসুল (সা.) এত দ্রুতবেগে এলেন যে তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হতে লাগল। তিনি তাঁর দুই হাঁটুর ওপর ভর করে বসে গেলেন এবং বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের রব আসমানের একটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের কাছে তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা এক ফরজ আদায়ের পর পরবর্তী ফরজ আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।’ -(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০১)

যারা মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করে তাদের নামাজ একা আদায় থেকে উত্তম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি’ (মুসলিম-১৪৭৭)।

আরেক হাদিসে নবীজী সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা লাভ করে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে তার প্রতি কদমে একটি নেকি দেয়া হয়। একটি করে গুনাহ মাফ করা হয়। একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় (মুসলিম-১০৯৩)।

ছবি : ইখলাস আল ফাহীম

বর্তমানে মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়ে অনেকে নিচতলার কাতার বা জায়গা খালি রেখে ওপরতলায় দাঁড়িয়ে যান। এতে মসজিদের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এ কারণে নামাজ নষ্ট হয় কিনা?- যেমন, একজন জানতে চেয়েছেন-

মসজিদের নিচ তলায় নামায আদায় করার জায়গা থাকা সত্ত্বেও যদি দ্বিতীয় তলায় নামায আদায় করে, তাহলে তার হুকুম কী?
এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের মতামত হলো- স্বাভাবিক অবস্থায় মুসল্লিদের কর্তব্য হলো নিচতলা পূর্ণ করার পরই ওপরতলায় দাঁড়ানো। নিচতলায় ফাঁকা রেখে ওপরতলায় দাঁড়ানো প্রায় সামনের কাতার পূর্ণ না করে পেছনের কাতারে দাঁড়ানোর মতোই। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা সামনের কাতার পূর্ণ করো। এরপর তার পরবর্তী কাতার। অপূর্ণ থাকলে তা যেন পেছনের কাতারে থাকে।’ -(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৬৭১; ফাতাওয়া বাজ্যাজিয়া : ১/৫৭; )

অতএব, মসজিদের নিচতলাতে জায়গা থাকা সত্ত্বেও উপর তলায় বা ছাদে নামাজ পড়া মাকরুহ। তবে কোনও বিশেষ কারণবশত এমনটি করলে কোনো সমস্যা নেই। তবে ওপরতলায় দাঁড়ালে শর্ত হলো, ইমামের দাঁড়ানোর অবস্থান এবং তার রুকু সেজদার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে হবে। —(আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৬৬; মুহীতে বুরহানী : ২/২০২; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ৯/৫০৪; নাওয়াযেল : ৪/৩৯৪; আহসানুল ফাতাওয়া : ৩/৪১২)