Home > রাজনীতি > ১০ ডিসেম্বরের আগেই মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় আওয়ামী লীগ

১০ ডিসেম্বরের আগেই মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় আওয়ামী লীগ

ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশের আগেই মাঠ দখলে নিতে চায় শাসক দল আওয়ামী লীগ। আর সেজন্য আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলটির সব ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শুধু দলীয় শক্তি নয়। একই সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন ও পুরোনো মামলাগুলোও কাজে লাগানো হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, বিএনপির সমাবেশগুলোতে আগুনসন্ত্রাসী ও জ্বালাও-পোড়াও মামলায় জড়িতরা যোগ দিচ্ছে। কোনোভাবেই অগ্নিসন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ছাড় দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের মাঠ দখলের পরিকল্পনার কেন্দ্রে আছে ২৪ ডিসেম্বর সংগঠনটির জাতীয় সম্মেলন। তার আগে মূল সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পার্যায়ের সম্মেলন শেষ করবে। আর এসব সম্মেলনে তারা নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাবেশ ঘটাতে চায়। ইতোমধ্যে ২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগ সম্মেলন করে। আওয়ামী লীগের ওই সম্মেলন ছিল বিএনপির সমাবেশের বিরুদ্ধে প্রথম শোডাউন। যদিও ওই দিন রংপুরে ছিল পরিবহন ধর্মঘট আর ঢাকা ছিল অবারিত।

যুবলীগের মহাসমাবেশ

আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মহাসমাবেশ করবে যুবলীগ। আর এই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই দিন ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটনানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে যুবলীগ। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন রাজপথ কাদের, তা ১১ নভেম্বর দেখিয়ে দেওয়া হবে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যেতে চায়। ওদের নৈরাজ্যের জবাব যুবলীগ একাই দিতে পারবে। তার প্রমাণ দেব ইনশাল্লাহ।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ বলেন, আমরা আশা করছি ওই দিন সমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি লোক থাকবে। আমরা সারাদেশে সমাবেশকে সামনে রেখে কাজ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই দিন করোনার পর বাইরে বড় কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা বিএনপিকে দেখিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। তারা গত প্রায় ১৫ বছর ধরেই সরকারের পতন ঘটাচ্ছে। এখন সমাবেশ করে বলছে, সরকারের পতন আসন্ন। আমরা আসলে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান প্রকাশ করছি।

এরপর আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশেও ১০ লাখ লোকের সমাবেশের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশেও প্রধান অতিথি থাকবেন শেখ হাসিনা। ৪ ডিসেম্বরের পর থেকে সব বিভাগীয় শহরে আওয়ামী লীগের একই স্টাইলে সমাবেশ করার পরিকল্পনা আছে। আর প্রত্যেক সমাবেশেই শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারেন। ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে হতে পারে এই বছরের চূড়ান্ত শোডাউন।

তৃণমূলে প্রস্তুতি

ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সমাবেশ চলতে থাকবে। ওইসব সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ মাসেই কুমিল্লা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ৫ নভেম্বর কুমিল্লা আদর্শ উপজেলা, ৯ নভেম্বর মনোহরগঞ্জ উপজেলা, ১০ নভেম্বর লাকসাম উপজেলা, ১২ নভেম্বর নাঙ্গলকোট উপজেলা সম্মেলনে বড় জমায়েতের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৪টির সম্মেলন ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। বাকি জেলাগুলোর সম্মেলনের তারিখও দেওয়া হচ্ছে। ২৪ ডিসেম্বরের আগেই এসব সম্মেলন হবে।

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ বলেন, ‘শুধু সম্মেলন নয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করব। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রলীগ-যুবলীগও আছে। আমরা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মিছিল-সমাবেশ করছি। বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। আর ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন সারাদেশে আমাদের সমাবেশের কর্মসূচি থাকতে পারে। তবে কেন্দ্র থেকে এখনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

আর কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিন উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। বিএনপি রংপুর বিভাগে যে সমাবেশ করেছে, তার চেয়ে বড় সমাবেশ যেকোনো জেলায় করতে পারি।

তিনি আরও জানান, ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জাতীয় কাউন্সিলের দিন সারাদেশ থেকে কাউন্সিলর ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল নামবে।

তার দাবি, ‘রংপুর বিভাগে ৯টি জেলা। সেখানে বিএনপির সমাবেশে ৮০ হাজার লোক হয়েছে। কিন্তু এই বিভাগে লোক কত? একটি উপজেলায়ও এরচেয়ে বেশি লোক হয় সমাবেশে।’

আরও যত পরিকল্পনা

১০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন হতে পারে ঢাকায়। ওই দিন বিএনপিরও মহাসমাবেশ। এর আগে ঢাকায় ২৪ নভেম্বর যুব মহিলা লীগের ও মহিলা আওয়ামী লীগের ৩ ডিসেম্বর সম্মেলন হওয়ার কথা। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১৭ ডিসেম্বর হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেরও সম্মেলন হবে আওয়ামী লীগের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের আগে। মোট কথা ১০ ডিসেম্বরের আগে এবং পরে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সম্মেলন এবং নানা কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকতে চায় আওয়ামী লীগ ও তার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন।

নির্বাচন প্রতিরোধ করতে চাইলে পাল্টা প্রতিরোধ

তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা কোথাও বিএনপির সমাবেশের পাল্টা সমাবেশ বা প্রতিরোধ করছি না। তারা এখন যে সমাবেশ করছে, তা তারা করতেই পারে। তবে হ্যাঁ, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর কেউ যদি নির্বাচন প্রতিরোধ করতে মাঠে নামে তাহলে আমরাও মাঠে নামব তাদের প্রতিরোধ করতে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সম্মেলনগুলো হচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী কোনো জেলায় বা বিভাগে সরকারি কর্মসূচিতে গেলে সেখানে তিনি আলাদাভাবে সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। সেই কারণেই তিনি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও যশোরে সমাবেশ করবেন। সব বিভাগে তিনি যাবেন কিনা সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দিন এবং আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয় আওয়ামী লীগের সমাবেশের সময় কেন ডাকা হয় না? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতারা পরিবহন ধর্মঘটের চাপ দিয়ে থাকতে পারে কিন্তু সরকার কিছু করছে না। পরিবহন নেতারা মনে করে— বিএনপি আগুন দিতে পারে, ভাঙচুর করতে পারে। তাই তারা গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগকে নিয়ে তাদের এই ভয় নেই।

রংপুরে পরিবহন ধর্মঘট না হলে বিএনপির সমাবেশে আরও বেশি লোক হতো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এই রকমই হতো। বরং ধর্মঘট ডেকে তাদের হাইলাইট করা হয়েছে।’

বিএনপি ৫ নভেম্বর বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ করবে। ইতোমধ্যে সমাবেশের আগের দিন থেকে সেখানে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।