Home > জাতীয় > সারাদেশ > পদ্মা সেতু উদ্বোধন : কেমন আছে গুজবে প্রাণ হারানো রেণুর পরিবার!

পদ্মা সেতু উদ্বোধন : কেমন আছে গুজবে প্রাণ হারানো রেণুর পরিবার!

২০১৯ সাল। দেশজুড়ে একটি গুজব চাউর- ‘পদ্মা সেতুতে শিশুর মাথা লাগবে।’ সরকার প্রজ্ঞাপন কিংবা বিভিন্ন প্রচার করে সেই গুজব বন্ধের চেষ্টা করে। ততক্ষণে ছেলেধরা সন্দেহে একে একে পাঁচজনকে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সব নির্মমতাকে যেন ছাপিয়ে যায় ঢাকায় তাসলিমা বেগম রেণু (৪০) নামের এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে হত্যার ঘটনা।

২০১৯ সালের ২০ জুলাই। রাজধানীর বাড্ডার একটি স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করানোর জন্য সেদিন খোঁজ-খবর নিতে বের হয়েছিল তাসলিমা বেগম রেণু। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাকে ছেলেধরা সন্দেহ করে বাইরে গুজব ছড়িয়ে দেন। মুহূর্তে নানান বয়সী কয়েকশ’ নারী-পুরুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তাদের রোষানল থেকে রক্ষা করতে রেণুকে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরও রক্ষা হলো না দুই সন্তানের জননী রেণুর। উচ্ছৃঙ্খল লোকজন সেখানকার লোহার গেট ভেঙে রেণুকে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এনে এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। পিটুনিতে নিহত হন রেণু। পরে এ ঘটনায় ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

এই নির্মমতার দিন সাভারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন তার বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমা। রেণুর ঘটনা শুনে এলাকায় ছুটে এসে দেখতে পান সারা গায়ে রক্ত মাখা তার বোন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে নিজের অনুভুতি জানাতে গিয়ে এভাবে ঘটনার বিবরণ দিলেন তিনি।

তিনি জানান, গুজব ছড়িয়ে রেণুকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে সেই বর্বরতার চিত্র চোখে ভেসে ওঠে। আজ পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাসের এই ক্ষণে আমার বোনের কথাও মনে পড়ে। সব গুজব ছাড়িয়ে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে শুনে ভালো লাগছে বলে জানান তিনি।

নাজমুন নাহার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের সর্বচ্চ শাস্তি দাবি করে বলেন, ইতোমধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিচার শুরু হয়েছে। বোনের হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এতে কাউকে আর এমন নির্মম গণপিটুনির শিকার হতে হবে না।

মামলার বাদী ও নিহত তাসলিমা আক্তার রেণুর ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, ‘গুজব আমার খালার প্রাণ কেড়ে নিলেও ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ থামিয়ে রাখতে পারেনি। যে পদ্মা সেতুর জন্য আমার খালাকে জীবন দিতে হয়েছে, আজ সেই সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত সেতুর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে গুজব রটনাকারী ও আমার খালার হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে পারলে আমরা আরও খুশি হতাম। সান্ত্বনা দিতে পারতাম তার অবুঝ দুই শিশু সন্তানকে।’

মেয়ের নির্মম মৃত্যুতে আজও কাঁদছেন বৃদ্ধা ছবুরা খাতুন (৭৫)। মাকে খুঁজে ফিরছে দুই কোমলমতি সন্তান তাহসিন আল মাহির (১৩) ও তাসমিম মাহিরা তুবা (৭)। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তুবা তার মায়ের বড় বোনের (খালা) সঙ্গে থাকে এবং তাকেই মা বলে ডাকে। এখন পড়ালেখা করছে প্রথম শ্রেণিতে। অন্যদিকে মাহিরকে ভর্তি করা হয়েছে মাইলস্টোন স্কুলে। সেখানে হোস্টেলে রেখে চলছে তার পড়াশোনা।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণে শিশুদের মাথা প্রয়োজন, এই গুজবে ২০১৯ সালে ছেলেধরা সন্দেহে সারাদেশে ২১টি গণপিটুনির ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়।