Home > জাতীয় > সারাদেশ > ফেসবুক-ইউটিউবে ‘মুমিন মুসলমান’ পেজের ‘জিনের বাদশা’ সরোয়ার গ্রেপ্তার

ফেসবুক-ইউটিউবে ‘মুমিন মুসলমান’ পেজের ‘জিনের বাদশা’ সরোয়ার গ্রেপ্তার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ‘মুমিন মুসলমান’ নামের পেজ খুলে ‘জিনের বাদশা’ পরিচয় দেওয়া সরোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তিনি এই পরিচয় দিয়ে সহজ, সরল ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণা করে আসছিলেন। সরোয়ার ও তার সহযোগীরা এই পন্থায় ইতোমধ্যে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 

 

 

আজ বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় দুই সহযোগীসহ সরোয়ারকে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১।

 

 

 

র‍্যাব জানায়, জিন, জাদুটোনা, ব্ল্যাকমেইল, বদনজর ও কুফরি কালামের প্রভাবে মানুষের যে ক্ষতি হয় তার সমাধান করতে পারে বলে তাদের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত প্রচার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিজ্ঞাপন দেখে আরোগ্য হওয়ার আশায় শারীরিক অসুস্থ নারী ও পুরুষদের কাছে নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে কবিরাজী চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি।

 

 

 

র‌্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (অপস অফিসার) সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ জানান, ‘কাগজ হয়ে যায় টাকা’ ও ‘অসুস্থ হলে সুস্থ করে দেবে জিন’ এমন বিভিন্ন অকৌশল অবলম্বন করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। চক্রের সদস্যরা সাধারণ নিরীহ মানুষকে রোগ থেকে মুক্তিদান, স্বল্পসময়ে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাদের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র‍্যাব-১-এর কাছে অভিযোগ দেয়। ফলশ্রুতিতে র‍্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

 

 

 

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-১ রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন ফায়দাবাদ কোর্টবাড়ী বাজারস্থ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূলহোতা সরোয়ারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে মামালা দায়ের করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 

 

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পঞ্চগড়ের মো. সারোয়ার হোসেন (২৭), পঞ্চগড়ের মো. লাজু পারভেজ (২৭) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবদুর রহমান (২৪)।

 

 

 

অভিযানে তাদের কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট, একটি চেকবই, সাতটি এটিএম কার্ড, একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, একটি প্রেস আইডি কার্ড, একটি ল্যাপটপ, দুটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, দুটি সিসি ক্যামেরা, ৯০০ টাকা মূল্যের বাংলাদেশি জালনোট, ছয়টি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিমকার্ড ও নগদ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা জব্দ করা হয়।

 

 

 

র‌্যাব-১-এর কর্মকর্তা নোমান আহমদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করত। তারা বিভিন্ন জেলার হতদরিদ্র সাধারণ নিরীহ মানুষদের রোগ থেকে মুক্তিদান, স্বল্প সময়ে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রলোভন দেখাত। এতে স্বল্প আয়ের মানুষরা সহজেই প্রলুব্ধ হতো। এই চক্রটি দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা বাবদ প্রথম সাক্ষাতে এক হাজার টাকা করে ফি গ্রহণ করত।

 

 

 

পরবর্তীতে গরিব অসহায় রোগীদের কাছে বিভিন্ন ধাপে ঝাঁড়ফুক, জিন তাড়ানোসহ ভুয়া কবিরাজি চিকিৎসার নামে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে নিত। সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণা সম্পর্কে জানার আগেই চক্রটি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করত এবং নতুন এলাকায় গিয়ে পুনরায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত। এভাবে তারা শত শত সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

 

 

 

সারোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সে একজন পোশাক শ্রমিক ছিল। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। সে কোনোদিন মাদ্রাসায় পড়ালেখা না করলেও কিংবা চিকিৎসা পেশায় কোনো প্রশিক্ষণ না থাকার পরেও নিজেকে চিকিৎসক ও মাওলানা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করত। সে তার সহযোগীদের সঙ্গে ২০১৯ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরস্থ লতিফপুর এলাকায় ভুয়া কবিরাজীর মাধ্যমে অসহায় নিরীহ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণা সম্পর্কে জানার আগেই তারা অবস্থান পরিবর্তন করে দক্ষিণখানস্থ ফায়দাবাদ এলাকায় এসে মানুষকে প্রতারিত করতে থাকে।

 

 

 

সারোয়ার হোসেন তার সহযোগীদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করত। এই চক্রটি প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে প্রথমে ফেসবুক ও ইউটিউবে ‘মুমিন মুসলমান’ নামের চ্যানেল খোলে। পরবর্তীতে জিন, জাদুটোনা, ব্ল্যাকমেইল, বদনজর, কুফরি কালাম, বান ও পোতে রাখার প্রভাবে মানুষের যে ক্ষতি হয় তার সমাধান করতে পারে বলে তাদের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত প্রচার করে।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিজ্ঞাপন দেখে আরোগ্য হওয়ার আশায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হতদরিদ্র শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ পুরুষ ও নারীরা তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য আসত। সারোয়ার হোসেন এসকল সহজ সরল, হতদরিদ্র, অসহায়, শারীরিক অসুস্থ নারী ও পুরুষদের কাছে নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে কবিরাজী চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।