Home > জাতীয় > সারাদেশ > মসজিদ নির্মাণ করবেন তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান ঋতু

মসজিদ নির্মাণ করবেন তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান ঋতু

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় ধাপে।নির্বাচনে উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম ঋতু। তিনিই দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে দ্বিগুণ ভোটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শপথ নিয়ে চেয়ারে বসেছেন। নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন। গত ৩ জানুয়ারি চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মাত্র দুই মাস হলো। দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিষদের অবকাঠামো থেকে শুরু করে সেখানকার সেবার ধরন কোনো কিছুই পছন্দ হয়নি তার। পরিষদের যাওয়ার রাস্তায় হাঁটুপানি, পরিষদ চত্বরে গরু-ছাগলের বিচরণ, ভবনের ছাদে ফাটল, বাথরুমের বেহাল, অনেক কক্ষে বৈদ্যুতিক বাল্ব নেই, ভাঙাচোরা চেয়ার-টেলিব দেখে আক্ষেপ করেন তিনি। তাই ইউনিয়ন পরিষদটির অবকাঠামোসহ সবকিছুই নিজের মতো করে সাজাতে চান।

কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ধলা দাদপুর গ্রামের আব্দুল কাদের ও ফাতেমা বেগম দম্পতির সন্তান ঋতু। ছোটবেলায় তার মা মারা যান। পাঁচ বছর আগে মারা যান তার বাবা। সাত ভাই-বোনের মধ্যে ঋতু তৃতীয়। তার তিন ভাই ঢাকায় থাকেন। বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চেয়ারম্যান কক্ষে ঢুকে চেয়ারম্যানকে ঘিরে ভিড় করে রেখেছে। চেয়ারম্যান মুখে কথা বলছেন, অন্যদিকে হাতের কাজ চলছে। কাউকে শাসন করছেন, কাউকে ভালোবাসছেন। যে যে সমস্যা নিয়ে আসছেন, সেই সমস্যার সমাধান নিজেই করে দিচ্ছেন।

৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আশিকুর জামান জানান, তিনি এর আগে তিনজন চেয়ারম্যানকে দেখেছেন। বিগত দিনে সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষ যে সমস্যার সম্মুখীন বা হয়রানি হয়েছে, সেগুলো আর হতে হচ্ছে না। তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নের জন্য সালিস-বিচারসহ পরিষদের সব কাজকর্ম সঠিকভাবে করে যাচ্ছেন। তার কাজের প্রতি সেবাপ্রার্থীরা সবাই খুশি।

দাদপুর গ্রামের রহিম উদ্দিন জানান, আগে পরিষদে এলে চেয়ারম্যানরা আজ-কাল বলে ঘোরাতেন। যেকোনো কার্ডের জন্য টাকা লাগত। কিন্তু বর্তমানে এই চেয়ারম্যান বলেছেন কার্ড করতে কোনো টাকা লাগবে না। কাজের জন্য আসবেন, কাজ শেষ করে বাড়ি যাবেন। দুই মাসে তিনটা কাজের জন্য তিনি পরিষদে এসেছেন। সঠিকভাবে কাজ করতে পরে খুশি তিনি।

ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, এবার দিয়ে ইউপি সদস্য হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এর আগেও দুজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে কাজ করেছেন। বর্তমানে তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান নিয়ে কাজ করতে পরে গর্বিত। পরিষদের সদস্য, সচিব, গ্রাম পুলিশসহ সবাই এখন আনন্দের সঙ্গে কাজ করছেন।

চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, ভোটে ইউনিয়নবাসী যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তার প্রতিদান দিতে চাই। ভোটের পর দলমত-নির্বিশেষে মানুষ আমার কাছে আসছে। আমিও মানুষের সুখে-দুঃখে থাকার চেষ্টা করছি। যে দলেরই কর্মী হোক না কেন, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। কে কোন দল করে, সেটি আমি দেখতে চাই না। আজীবন জনকল্যাণে কাজ করতে চাই। পরিষদে সরকারি ফি ছাড়া বাড়তি কোনো টাকা নয়।

তিনি আরো বলেন, আমার নির্বাচিত এলাকায় দুই দিন আগে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ইউনিয়নের যেসব রাস্তাঘাট ছিল, তা চলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাগুলো খুবই অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। এই এলাকার রাস্তাঘাট ভালো না। দ্রুত রাস্তাঘাট উন্নয়নের উদ্যোগ নেব। মানুষের যাতায়াত করতে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ছাড়া মসজিদ-মন্দির, স্কুল-কলেজ নির্মাণের পাশাপাশি এই ইউনিয়নের মানুষের সুচিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণ করব।