Home > রাজনীতি > পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ-কুয়েত রোডম্যাপ

পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ-কুয়েত রোডম্যাপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ। এ ছাড়া কুয়েতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন সেক্টরে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে একটি রোডম্যাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ও কুয়েত।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক সময় দুপুরে জাতিসংঘ সদরদপফতরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল সাবাহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আব্দুল মোমেন।

লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠক হয়। কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক দিনের পুরনো সম্পর্ক। উনি (কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ এবং কুয়েত একটা রোডম্যাপ তৈরি করবে, অ্যাকশনেবল প্রোগ্রাম তৈরি করবে। যাতে আমাদের সম্পর্ক আরও অধিকতর শক্তিশালী হয় এবং বিভিন্ন রকম প্রজেক্ট হাতে নেওয়া যায়।

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে খুবই ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই রোডম্যাপ তৈরির বিষয়ে বিস্তারিত কাজ করা হবে। আমাদের আলোচনা করতে হবে যে কি কি ক্ষেত্রে আমরা তাদের সাহায্য চাইবো এবং তারা আজকে বলেছে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা আমাদের সাহায্য চায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই কুয়েত ফান্ড থেকে অনেকগুলো প্রজেক্ট দেশে চালিয়েছি। আমরা আরও চাই এবং তারাও আগ্রহী। তারা রিফাইনারি করার জন্য বাংলাদেশে উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অবশ্যই আমরা তাদের জায়গা দিয়ে দেব। সুতরাং আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

কুয়েত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরে আব্দুল মোমেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কুয়েতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরে যিনি আমির হন তিনি ঢাকায় এসে ওআইসি সম্মেলনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে কুয়েতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক।

কুয়েত একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কুয়েতের অর্থায়নে পাঁচটি বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা সেগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে চাই, আরও বড় চাই। রিফাইনারি করার জন্য তাদের থেকে প্রাথমিক একটা প্রস্তাব এসেছে। এখন এটা আরও সুনির্দিষ্ট হবে।

কুয়েত ফান্ড সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো.শাহরিয়ার আলম বলেন, কুয়েত ফান্ডটি বাংলাদেশে প্রথম দফায় ব্যবহার করা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে। দ্বিতীয় দফার যে ফান্ড, যেটা ১০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হবে, সেটার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। প্রথম দফার যে ৫০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প সেটার সবগুলো বাস্তবায়ন হয়ে গেছে।

কুয়েত সেনাবাহিনীতে ‘বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট’ নামে একটা কন্টিনজেন্ট আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ করে ইরাক যখন কুয়েত আক্রমণ করে, কুয়েতের বর্ডারে যে মাইনগুলো তখন ছিল সেগুলো সরানোতে এখনো পর্যন্ত যদিও কুয়েত সেনাবাহিনীর নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চূড়ান্তভাবে সেটাকে আরেকবার দেখেছে। তারপর এই এলাকা উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর এই অবদানের কথা তারা পুনঃব্যক্ত করেছেন বলেও জানান মো.শাহরিয়ার আলম।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ষ্টিফেন লোফভেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ। এ ছাড়া কুয়েতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার জাতিসংঘ সদরদফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ এই বৈঠক করেন। বৈঠকে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি রোডম্যাপ (পথনকশা) তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসসের।

বৈঠকের পর নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে একটি রোডম্যাপ ও একটি অভিযোগ্য কর্মসূচি প্রস্তুত করতে চায়।’

ড. মোমেন দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার সূত্র ধরে তিনি পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ও সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র বাছাই করতে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার স্থাপনের ব্যাপারে তার দেশের আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করেন এবং তাদের দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা চান। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং প্রস্তাবিত তেল শোধনাগারের জন্য প্রয়োজনীয় জমি প্রদানের ব্যাপারে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের প্রয়োজনীয় সামরিক প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতা দেব।’

১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে কুয়েতের দিকে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং এই সহযোগিতার স্বীকৃতিস্বরূপ কুয়েত তাদের একটি সামরিক ইউনিটের নামকরণ করে ‘বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, কুয়েত তাদের কুয়েত ফান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাঁচ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করে এবং বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাঁচটি মেগা প্রকল্পের জন্য কুয়েত ফান্ডের মাধ্যমে আরও ১০ কোটি মার্কিন ডলার গ্রহণে কুয়েতের সঙ্গে আলোচনার একবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্যন্য।’

এর আগে শেখ হাসিনা বুধবার সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফান লফভেনের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। সমসাময়িক বিশ্বে একজন বিখ্যাত শ্রমিক নেতা হওয়ার খ্যাতি অর্জন করেন স্টিফান।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, তার সরকার কর্মীদের স্বার্থের জন্য আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এ ব্যাপারে তিনি তার পরামর্শ চান। শেখ হাসিনা একইসঙ্গে তাকে অবহিত করেন যে, প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে মহামারী করোনাভাইরাস চলাকালেও কোন বাংলাদেশি গার্মেন্টস শ্রমিকরা চাকরি হারায়নি।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা হোটেল লটে নিউইয়র্ক প্যালেসে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিফ্রিংকালে উপস্থিত ছিলেন।