Home > জাতীয় > সারাদেশ > রাজৈরে কোটি টাকা নিয়ে উধাও প্রতারক ‘মাদরাসা শিক্ষক’

রাজৈরে কোটি টাকা নিয়ে উধাও প্রতারক ‘মাদরাসা শিক্ষক’

দানশীল এবং পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের বাসাবড়ি মোহাম্মদীয়া ইসলামী মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম মো. আবু সাঈদ ভুইয়া (৪৫)। গরু-ছাগল, ঘর-বাড়ি, মসজিদ ও সরকারি চাকরি- এছাড়াও ব্যবসার পার্টনারের কথা বলে এলাকাবাসীর সাথে নতুন কৌশল অবলম্বন করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে সে। আবু সাঈদ পিরেজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার খালেক ভুইয়ার ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার। এ ভুয়া শিক্ষক ১১ মাস আগে আব্দুল ওহাব আলী শেখের বাড়িতে তার স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে থাকতেন বলে জানায় ভুক্তভোগীরা। প্রতারণার অভিযোগে রাজৈর থানায় মামলা দায়ের করেছে সাবরিনা মাহমুদ নামে ভুক্তভোগী এক নারী।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানান, আবু সাঈদ উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের বাসাবড়ি মোহাম্মদীয়া ইসলামী মাদরাসা ও এতিমখানায় শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম পরিচয়ে আমাদের এলাকার মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। তিনি আমাদের এখানে এসে মসজিদের ইমামতি করতেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাদরাসার শিক্ষক পরিচয় দিয়ে চলতেন। কথনো কখনো রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করতেন। গত সোমবার তার থাকার ঘরে তালাবদ্ধ করে স্ত্রী ও ছেলেকে ডাক্তার দেখানের কথা বলে পালিয়ে যায়। আবু সাইদ ভুইয়া প্রথমে কৌশলে পালিয়ে যায়। এখানে থেকে তিনি অন্যের ফসলি জমি চাষ করতেন এবং মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য করোনা মহামারিতে দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতেন। এটা ছিল তার প্রতারণার একটা কৌশল। ঘর দেবেন, মসজিদ বানিয়ে দেবেন, জমি ও ব্যবসা করতে টাকা দেওয়ার কথা বলে তিনি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তার প্রতারণার হাত থেকে বাদ যায়নি বৃদ্ধ আজিরনও। আজিরন বেগম বলেন, আমার একটা ভাঙা ঘর আছে। তা দেখে হুজুর আমাকে বলেন, আনে ভাঙা ঘরে থাকেন কেন? আমি আপনাকে একটা নতুন ঘর তৈরি করে দেব। সেই ঘরের দাম ৪ লাখ টাকা। কিন্ত তা আনতে খরচ হবে কাউকে বলবেন না। আমাকে ৬০ হাজার টাকা দেন। এ বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।

ভুক্তভোগী আব্দুল ওহাব আলী শেখ বলেন, আমার দুটি ঘর ছিল। একটি ঘর হুজুরকে থাকতে দিয়েছি। আমি ঢাকা থাকি। আমাকে ব্যবসায় প্রচুর টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছেলে, স্ত্রীর ও আমার কাছ থেকে অগ্রিম ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। মতিয়ার চোকদার বলেন, ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মসজিদ করে দিবে বলে আমাদের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। মসজিদ নির্মাণের কাজও শুরু করেছিল। এটা ছিল তার লোক দেখানো কৌশল। তিনি আমাদের জানান, আরো ৩টি মসজিদ করে দিয়েছি। মহিষমারী গ্রামে আমার তৈরি করা একটা মসজিদের উদ্ধোধন হবে। এখন লোকের কাছে শুনি সে পালিয়েছে। তাকে ফোন দিলে সে বলে আমি ফরিদপুর আছি। তার পর থেকে ফোন বন্ধ। নরারকান্দী গ্রামের এক পশু ডাক্তারের ছেলেকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। মেসার্স চৌধুরী রাইচ মিলের মালিক ও রাজৈর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রসূন চৌধুরী জানায়, প্রথমে আমাদের কাছ থেকে দুই লাখ ১৫ হাজার টাকার চাল নেয়। পরে সে আমাকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়। সর্বশেষ দুই লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকার চাল নিয়ে সে পালিয়ে যায়।

বাসাবাড়ী মোহাম্মদীয়া ইসলামী মাদরাসার সুপার হাফেজ আবু হালিম জানান, আবু সাঈদ আমাদের মাদরাসার এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক না। আমাদের এখানে সকালে বিকালে এসে বসত এবং কিছু ছাত্র পড়াত। প্রতারণার বিষয়ে তিনি জানান, আমাকে স্বাক্ষী রেখে কেউ কোনো টাকা পয়সা দেয়নি। ফলে বিষয়টি আমার জানা নেই। আমিও শুনেছি। রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদী জানান, এ ব্যাপারে সাবরিনা মাহমুদ নামে একজন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত এগিয়ে চলছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহানা নাসরিন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ