Home > বিশেষ সংবাদ > সংসদেই কেটেছে নাসিমের ২৫ বছর

সংসদেই কেটেছে নাসিমের ২৫ বছর

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ নাসিম ৭২ বছর বয়সের জীবনের ২৫ বছরই কাটিয়েছেন জাতীয় সংসদে। আর রাজনীতি করে পার করেছেন জীবনের প্রায় ৫০ বছর। এই দীর্ঘসময়ে তিনি যেমন আওয়ামী লীগ ও দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন তেমনি মানুষের ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ-১ আসন (কাজীপুর ও সদর উপজেলার একাংশ) রথকে পাঁচবার নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য হিসেবে।

জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের হুইপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের এই সদস্য। সর্বশেষ মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ঘাতকের হাতে নিহত জাতীয় চার নেতার অন্যতম একজন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম নিজ যোগ্যতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন দেশের সর্বজনবিদিত অন্যতম রাজনীতিক হিসেবে।

১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদের হুইপ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালণ করেন।

সংসদের সাথে তার দীর্ঘসময়ের এই পথচলায় নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন রাজনীতিক ছাড়াও সংসদে কর্মরতদের অনেকে। গতকাল তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে সংসদ সচিবালয়ে কর্মরতদের মাঝে। শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপবৃন্দসহ সংসদ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

সহকর্মী হারিয়ে শোকে মুহ্যমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কারণে বহুবার কারাবরণকারী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসন হতে মোট ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামানা করেন। শোক প্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীও।

এদিকে সহকর্মী এমপিরাও তার মৃত্যুতে শোকে বিহবল হয়ে পড়েছেন। জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। আজীবন দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এ রাজনীতিবিদ। তার মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জনসেবা, দেশ ও সমাজের উন্নয়নে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, মোহাম্মদ নাসিম আজীবন জাতির পিতার আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অটল ছিলেন। তিনি আজীবন দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। তাঁর মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. শিবলী সাদিক এমপি বলেন, পিতার মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সব ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারালো।

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে জাতি একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানকে হারিয়েছে। এই ক্ষতি কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়।

সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একজন দক্ষ কর্মীকে হারাল এবং দেশ একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে হারাল। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ এক অপরিহার্য নেতাকে হারালো। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে তার এ অভাব কখনও পূরণ হওয়ার নয়।

উলে­খ্য, মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করে আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গতকাল শনিবার চির বিদায় নেন।