Home > জাতীয় > সারাদেশ > যে কারণগুলো করোনা থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশকে

যে কারণগুলো করোনা থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশকে

সারা পৃথিবী জুড়েই করোনাভাইরাসের আতঙ্কে। তবে গবেষকরা হিসেব করে দেখাচ্ছেন, এতটা আতঙ্কের কিছু নেই। করোনা মানেই মৃত্যু, ব্যাপারটা আসলে মোটেও তা নয়। সামগ্রিকভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের হার ৩-৪ শতাংশ মাত্র। তার মানে ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছেন প্রায় ৯৭ জন। এতো গেল সারা বিশ্বের কথা, বাংলাদেশের জন্য আরো বেশি আশার বাণী শোনাচ্ছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে বাংলাদেশ বেঁচে যেতে পারে করোনাভাইরাসের বড় ধরনের সংক্রমণ থেকে।

উষ্ণ আবহাওয়া: প্রায় সব গবেষকরাই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন, উষ্ণ আবহাওয়া ভাইরাসটির গতি অনেকাংশে কমিয়ে দেবে। এমআইটি থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে এটি দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে না। একই কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি। বাংলাদেশে এখন নামছে চৈত্রের গরম, মে মাসের শেষ পর্যন্ত যা উত্তোরোত্তর বাড়বে। সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাস এখানে খুব একটা গেড়ে বসতে পারবে না।

বিসিজি টিকা: বলা হচ্ছে, যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য দেওয়া বিসিজি টিকা করোনাভাইরাস ঠেকিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। মেডআর্কাইভ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমন সুখবর দিয়েছে। স্বাধীনতারও আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশে বিসিজি (ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গুউরিন) টিকার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় যক্ষার এ ভ্যাকসিনটি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসের মতো বেশ কিছু দেশে বিসিজি টিকার কর্মসূচি নেই। তাই এটিও হতে পারে বাংলাদেশের জন্য রক্ষাকবচ।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা: বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই। তাছাড়া, একটু উল্টো মনে হলেও, এখানকার দূষিত পরিবেশই আমাদের জন্য হয়ে উঠতে পারে আশীর্বাদ। এমন পরিবেশের কারণেই ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের চেয়ে আমাদের অভিযোজন ক্ষমতা বেশি। সে কারণে আমাদের দেশে ইউরোপ-আমেরিকার মতো এতবেশি মানুষ আক্রান্ত নাও হতে পারে।

শুরুতেই পদক্ষেপ: ধীর গতিতে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, এটা সত্য। তবে বাংলাদেশে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে শুরু থেকেই। যার কারণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়নি। ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা স্পেন কিন্তু তা করেনি। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরও ইতালিতে চলেছে ফুটবল ম্যাচ। জানা যায়, সেখান থেকেই বিদ্যুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এটাকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে কটাক্ষ করে সময় কাটিয়েছেন।

তৈরি হচ্ছে ন্যাচারাল এন্টিবডি: ভাইরাসটি সবসময় একই গতিতে সংক্রমণ ঘটিয়ে যাবে তা কিন্তু নয়, আস্তে আস্তে সে তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। কারণ ততদিনে আক্রান্তদের অর্ধেকের শরীরে তৈরি হবে ন্যাচারাল এন্টিবডি, যা বাঁচিয়ে দেবে আক্রান্ত বাকিদেরকে। তাছাড়া সময়ের ব্যবধানে একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে ন্যাচারাল ইমিউনিটি বা প্রাকৃতিক সুরক্ষা দেয়াল তৈরি হয়। এদিক থেকে হিসেব করলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে চীনের উহানে শুরু হওয়ার অনেক পর। যার কারণে কারোনা প্রতিরোধে একটা ন্যাচারাল সাহায্য পাবে বাংলাদেশ।

ধূপমান ও মদ্যপান: ভারতের হায়দরাবাদে অবস্থিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজির (এআইইজি) চেয়ারম্যান ও পদ্মভূষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি বলেন, ইতালি কিংবা ইউরোপের দেশগুলোতে এত বেশি মানুষের মৃত্যুর একটা বিশেষ কারণ আছে, যেটা আমাদের উপমহাদেশে খুব একটা নেই। ওইসব দেশের অধিকাংশ বৃদ্ধরাই মদ্যপায়ী। এর পাশাপাশি তাদের রয়েছে উচ্চ রক্তচাপের আধিক্য। তাই আক্রান্ত হওয়ার পর তারা আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।

মানসিক স্বাস্থ্য: ভারতীয় চিকিৎসক নাগেশ্বর রেড্ডি আরো বলেন, যারা মানসিকভাবে শক্ত ও সুখী, তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি থাকে। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ এজন্য এগিয়ে থাকবে বলেই আমি মনে করি। তিনি বলেন, ‘হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ভয় পাবেন না, ঘরে বসে নিজের স্বাধীনতা উপভোগ করুন।’