Home > ধর্ম > হে আল্লাহ সৌভাগ্য ও ক্ষমার পবিত্র শবে বরাত রাতে ‘করোনা’ থেকে আপনার করুণা চাই

হে আল্লাহ সৌভাগ্য ও ক্ষমার পবিত্র শবে বরাত রাতে ‘করোনা’ থেকে আপনার করুণা চাই

শান্তির ধর্ম ইসলাম সুনির্দিষ্ট মূলনীতির ভিত্তিতে চলে। মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ে ইসলাম পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দিয়েছে। একজন মুসলমানকে তার জীবন চলার পথে কোনো নিয়মনীতিই অন্য কোনো জাতি বা তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে ধার করতে হয় না।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আজ তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।‌‌‌ (সুরা মায়েদা: আয়াত-৩)

আমরা বর্তমানে এমনই এক সময় পার করছি, যখন সারা পৃথিবীর সব কিছুই প্রায় অচল! টিভির পর্দা খুললেই দেখা যায়, পৃথিবীতে চলছে লাশের মিছিল। হাট-বাজার, কল-কারখানা, পরিবহনসহ পুরো জনজীবনেই বিরাজ করছে একটাই আতঙ্ক, যার কারণ আমাদের সকলেরই জানা, নাম তার ‘করোনা’।

অদৃশ্য এই ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে অদ্যবধি প্রায় অর্ধ লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ চলে গেছে মৃত্যুপুরীতে! যার পরিপেক্ষিতে পুরো পৃথিবী আজ (গৃহবন্দি) লকডাউন। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের সামনে এসে হাজির হল পবিত্র শাবান মাস, আর এই পবিত্র মাসের আরো স্পেশালিটি হলো শবে বরাত।

এই শবে বরাত নিয়ে আমাদের সমাজে যেমন বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হয়, তেমনিভাবে উদাসীনতারও কমতি নেই। আমাদের জানতে হবে, ইসলাম সর্বদা ভারসাম্যপূর্ণ এবং সকল বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

বলাবাহুল্য যে, এই রাতের কথা যদিও পবিত্র কুরআনে সরাসরি কোন কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু এই রাতের বিষয়ে হাদিস শরিফে অনেক আলোচনা রয়েছে। তবে অনেক আলেম সূরা দুখানের তিন এবং চার নং আয়াতকে এই রাতের দলিল হিসেবে উত্থাপন করে থাকেন।

তবে অধিকাংশ মুফাসসির (তাফসীরকারক) বলেছেন, সূরা দুখানের তিন এবং চার নং আয়াত দ্বারা লাইলাতুল ক্বদরের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে শবে বরাত

হাদিস শরিফে ‘শবে বরাত’ বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হল ‘নিসফ শাবান’ বা ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ তথা শাবান মাসের মধ্য রজনী।

একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলছেন, আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তার সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। (ইবনু মাজাহ: ১/৪৪৫; মুসনাদে আহমদ ২/১৭৬) একাধিক সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা পালন করতেন।

শাবান মাসের রোজা ছিল তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এমাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনো কখনো প্রায় পুরো শাবান মাসই তিনি নফল রোজা পালন করতেন।

এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ মাসে রাব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের কর্ম (আমল) উঠানো হয়। আর আমি ভালবাসি যে, রোজা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক। (নাসাঈ: ৪/২০১)

অপর হাদিসে হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি রাসূল (সা.) কে খুঁজে না পেয়ে তাকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে জান্নাতুলবাকিতে পেলাম। তখন রাসূল (সা.) আমাকে বললেন, তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তার রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন?

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গিয়েছেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা শাবানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন। (মুসনাদে আহমাদ:৬/২৩৮;তিরমিযি:২/১২১)

আরেক হাদিসে হযরত আবু মূসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা শাবানের মধ্যরাত্রিতে প্রথম আকাশে আগমণ করেন, অতঃপর মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ: ১/৪৫৫)