Home > জাতীয় > সারাদেশ > লুঙ্গি পরেই অফিস করেন রেল কর্মকর্তা, নড়েন না টাকা ছাড়া!

লুঙ্গি পরেই অফিস করেন রেল কর্মকর্তা, নড়েন না টাকা ছাড়া!

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) মো. মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ঘুষ দুর্নীতি আর দাম্ভোক্তিই তার প্রধান পুঁজি। সরকারি বিধিনিষেধ না মেনে লুঙ্গি পরেই নিয়মিত অফিস করা, স্টাফ ও যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার, ঘুষ ছাড়া মেলেনা আন্তঃনগরীয় ট্রেনের টিকেট। কালোবাজারীদের সাথে সুসম্পর্কসহ নানান অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সহকারি স্টেশন মাস্টারের কক্ষে তিনি দায়িত্বরত কর্মকর্তার চেয়ারে লুঙ্গি পরেই বসে আছেন এবং ট্রেনের টিকেট বিক্রিসহ নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

প্রথমে অন্য কোন কর্মকর্তা ভাবলেও পরে মো. মারুফ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনিই স্টেশন মাস্টার এবং লুঙ্গি পরেই তিনি অফিস করছেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে সরকারিভাবে নির্ধারিত যাতায়াত ভাড়ার অতিরিক্ত মূল্যে ট্রেনের টিকেট বিক্রি, রেলওয়ের গোডাউন ভাড়া দেয়া এবং রেলের সম্পত্তি রক্ষণা-বেক্ষণে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘স্টেশন মাস্টার মারুফ হোসেন লুঙ্গি পরেই নিয়মিত অফিস করেন। দূরপাল্লার টিকেটে (লাকসাম, চট্টগ্রাম) ২০ থেকে ৫০ টাকা করে বেশি রাখেন। গত কয়েকমাস যাবৎ রেলের গোডাউন ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায় করছেন। এবং রেলে সম্পত্তি (ভূমি) চাষের জন্য ইজারা এনে স্থানীয়রা ঘর নির্মাণ করছেন। অথচ তিনি এ বিষয়ে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মারুফ হোসেন মার্জিত পোশাক তো দূরে থাক একেবারে বাসার পোশাকেই অফিস করছেন এবং আরাম আয়েসেই তার দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অর্থাৎ নিজের অফিসকে অনেকটা বাসস্থানের মতো তৈরি করে ফেলেছেন। তার সাথে কথা বলার সময়ে লুঙ্গি পরেই কথা বলেন মারুফ। এ সময় দেখা যায় তিনি এক যাত্রীর কাছে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য ২৬০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট বিক্রি করেছেন। যার সরকারিভাবে নির্ধারিত ফি ২২০ টাকা। অথচ নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত মূল্যে ট্রেনের টিকেট বিক্রির সুযোগ নেই।

অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে, মারুফ হোসেন কোনো জবাব দেননি। পোশাকের বিষয়ে বিডি২৪লাইভকে তিনি বলেন, ‘আমি একা মানুষ। সবকিছু আমাকেই দেখতে হয়। এখন দুপুর বেলা, গোসল করতে যাবো। তাই লুঙ্গি পরা অবস্থায় আছি।’ গোডাউন ভাড়ার বিষয়ে মারুফ বলেন, ‘গোডাউন ভাড়া দেওয়া হয়নি। রেল লাইনের কাজ চলমান রয়েছে। যিনি (ঠিকাদার) কাজ পেয়েছেন। তার মালামাল গোডাউনে রাখা হয়েছে।’ এছাড়া ভূমি রক্ষণা-বেক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা রেলের সম্পত্তি দখলে আছেন, তারা ইজারা নিয়েছেন।’ শুধুমাত্র চাষাবাদের জন্য ইজারা, দোকান-ঘর নির্মাণের জন্য নয় এমন প্রশ্নের জবাবে বিডি২৪লাইভকে তিনি বলেন, ‘এটার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ তবে এ ব্যাপারে তিনি কোনো ডকুমেন্ট (লিখিত) দেখাতে পারেননি। এ সময় তিনি রেলের ১৭টি ডিপার্টমেন্ট (বিভাগ) রয়েছে বলেও জানান। এ ব্যাপারে রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার (ডিসিও) আনসার আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে পরিদর্শক পাঠিয়ে তদন্ত করা হবে। তার (মারুফ হোসেন) বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমানিত হলে, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’