Home > আন্তর্জাতিক > ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার গোমর আগেই ফাঁস হয়

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার গোমর আগেই ফাঁস হয়

সোলেইমানি হত্যার বদলায় বুধবার ভোরে ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তার খবর আগে থেকেই জানতো যুক্তরাষ্ট্র। প্রকৃত হামলার আগেই ট্রাম্প প্রশাসনে সম্ভাব্য হামলার তথ্য চলে যায়। বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন সামরিক ও হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের বরাতে এ খবর জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তার বলছেন গোয়েন্দা সূত্র ও ইরাক থেকে তাদেরকে হামলা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই আমরা জানতাম এবং ইরাকিরাও আমাদের এ সম্পর্কে বলেছিল।’

ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টা আগেই আমাদের কাছে খবর এসেছিল যে ইরানিরা আমাদের ঘাঁটিতে হামলা চালাতে যাচ্ছে।’ তবে ঊর্ধ্বতন এক সামরিক কর্মকর্তা এই ঘটনায় ইরাকের ভূমিকাকে গুরুত্বহীন অভিহিত করে বলেন, ‘তারা (ইরাকিরা) যদি সতর্ক করতো তাহলে সেটা কয়েক ঘণ্টা আগে হতো না।’

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ (প্রতিরক্ষা প্রধান) জেনারেল মার্ক মিলে ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার।

মার্কিন দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই ইরানের হামলা সম্পর্কে জানতে পারার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কমান্ডাররা মার্কিন সেনাদের ঘাঁটি থেকে সরিয়ে সুরক্ষিত বাঙ্কারে স্থানান্তরিত করার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল হাতে। এছাড়া হামলার পরও বেশ কয়েকঘণ্টা সেনারা সেসব গোপন স্থান থেকে বের হয়নি।

এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলার আগেই গোয়েন্দা তথ্য আসার কারণে পশ্চিম ইরাকে অবস্থিত আল-আসাদ ঘাঁটি থেকে কিছু মার্কিন সেনা অন্যত্র চলে যায়। অপর এক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ যে নিহত হয়নি এটা ভাগ্যের কারণে নয়। হ্যা ভাগ্য সবসময় একটা ভূমিকা রাখে কিন্তু এর পেছনে ছিল সামরিক কমান্ডাররা ভালো প্রতিক্রিয়া।

গতকালের ওই হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এটা স্বীকার করেছেন যে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা বড় ভূমিকা রেখেছে এবং এর কারণেই কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। সামরিক কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট এখানে রাডার নেটওয়ার্কের প্রসঙ্গ টেনেছেন, যা মার্কিন সামরিক বাহিনীকে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রের আগাম খোঁজ দেয়।

ইরানের এই হামলা পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য আসছিল দুটি গোয়েন্দা সূত্র থেকে। প্রথম সূত্রটি থেকে যে তথ্যটি এসেছিল তা হলো, ইরাকে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্যে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। আর দ্বিতীয় সূত্রটি হলো টেকনিক্যাল। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে এই হামলার তথ্য দিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে গত শুক্রবার বাগদাদ বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল সোলেইমানি এবং ইরাকের হাশদ আল-শাবি নামে পরিচিত পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের (পিএমইউ) প্রধান আবু মাহদি আল-মুহানদিস ও তাদের আট অনুসারী।

সোলেইমানি হত্যার বদলা নিতে পাঁচদিন পর বুধবার ভোরে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানঘাঁটিতে অন্তত ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তাদের দাবি হামলায় ৮০ জন ‘মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বুধবার ভোরের ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বুধবার মধ্যরাতে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলের আইন আল আসাদ এবং কুর্দিস্তানের ইরবিলের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। হামলা শুরু হয় স্থানীয় সময় রাত পৌনে ২টায়। হামলা চলে রাত পৌনে ৩টা পর্যন্ত। তেহরান বলছে, সোলেইমানি হত্যার বদলা নিতেই এ হামলা কিন্তু তারা কোনো যুদ্ধ চায় না।

হামলার পরপরই এর আগে ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘সব ঠিক আছে, ইরাকে দুটি বিমান ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের তথ্য মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যা হয়েছে, ভালো হয়েছে! আমাদের রয়েছে সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী। বিশ্বের নানান স্থানে তারা রয়েছে।’