Home > জাতীয় > সারাদেশ > দেশে এই প্রথম তারবিহীন খোলা আকাশ, নতুন আলোয় সিলেট!

দেশে এই প্রথম তারবিহীন খোলা আকাশ, নতুন আলোয় সিলেট!

সড়কটিতে নেই কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা তারের জঞ্জাল। তবু জ্বলছে রং-বেরঙের আলো। সিলেট নগরীর হ’জরত শাহ’জালাল (রহ.)-এর মাজার এলাকায় ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন চালু হয়েছে। লাল-নীলসহ রং-বেরঙের আলো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রশস্ত সড়কের দুপাশে সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ ভবন। শেষ প্রান্তে হ’জরত শাহ’জালাল (রহ.) মাজারের প্রবেশ গেট, তার ঠিক পেছনে মাজার ম’সজিদ ভবনের ওপরে সবুজ রঙে ভেসে আসছে ডিজিটাল বোর্ডে খচিত ‘আল্লাহু’ শব্দটি। এতে নেই কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা তারের জঞ্জাল। দেখে মনে হবে ইউরোপের কোনো এক দেশ।

বর্ণনার মতো এমন একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে গত রোববার রাত থেকে। দেশ-বিদেশ থেকে ছবিটি অসংখ্যবার শেয়ার করা হয়েছে। তারা দেশের পরিবর্তন ও উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন ছবিটিকে। অনেকে লন্ডন শহরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

সিলেট নগরীকে স্মা’র্ট সিটিতে পরিণত করতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গত রোববার হ’জরত শাহ’জালাল (রহ). মাজার এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভূগর্ভস্থ (আন্ডারগ্রাউন্ড) বৈদ্যুতিক লাইন চালু করা হয়। ওই দিন রাতেই জুনায়েদ শামস নামের এক ব্যক্তি এ এলাকায় তোলা ছবিটি তাঁর ফেসবুকে আপলোড করেন। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে।

সড়কটিতে নেই কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা তারের জঞ্জাল। তবু জ্বলছে রং-বেরঙের আলো। সিলেট নগরীর হ’জরত শাহ’জালাল (রহ.)-এর মাজার এলাকায় ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন চালু হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্ম’দ বদরুদ্দোজা বদর তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রশংসনীয় উদ্যোগ, দরগাহ গেট সংলগ্ন রোডে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের জটলা বিহীন দৃশ্য অবলোকন করছেন সিলেটবাসী। বাংলাদেশে সম্ভবত এই দৃশ্য প্রথম।’

বেসিক ব্যাংক কর্মক’র্তা রাশেদ খান লিখেছেন, ‘সিলেটের দরগাহ গেটে বৈদ্যুতিক লাইন মাটির নিচ দিয়ে টানিয়ে জঞ্জালমুক্ত করা হয়েছে—যা বর্তমান সরকারের অন্যতম সফলতা।’

স্থানীয় ফটোসাংবাদিক এ এইচ আরিফ লিখেছেন, ‘মাটির নিচে বৈদ্যুতিক তার। বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক শহরের যাত্রা শুরু।’

নেই বিদ্যুতের খুঁটি-তারের জঞ্জাল। তার পরও জ্বলছে দোকান-হোটেলের বাতি। যা বাড়িয়েছে সৌন্দর্য। এমন উদ্যোগ এবং তা বাস্তবায়নে নগরবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন।

সড়কটিতে নেই কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা তারের জঞ্জাল। তবু জ্বলছে রং-বেরঙের আলো। সিলেট নগরীর হ’জরত শাহ’জালাল (রহ.)-এর মাজার এলাকায় ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন চালু হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
সিসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামীতে নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার বিদ্যুৎ সাব স্টেশন কেন্দ্র থেকে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন আম্বরখানা হয়ে চৌহাট্টা পর্যন্ত যাবে। চৌহাট্টা থেকে একটি লাইন যাবে নগরীর জিন্দাবাজার-কোর্ট পয়েন্ট হয়ে সিলেট সার্কিট হাউজ পর্যন্ত। আরেকটি লাইন যাবে চৌহাট্টা থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত।

আধ্যাত্মিক নগর হিসেবে পরিচিত এই নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বছরের ১২ মাসই বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। এর ধারাবাহিকতায় নতুন বছরের শুরুতেই তারহীন জঞ্জালমুক্ত নগরীর দেখা মিলতে শুরু করেছে। এতে মুক্ত নীল আকাশ সিলেটে আগত দর্শনার্থীদের আলাদা মুগ্ধতা দেবে।

সড়কটিতে নেই কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা তারের জঞ্জাল। তবু জ্বলছে রং-বেরঙের আলো। সিলেট নগরীর হ’জরত শাহ’জালাল (রহ.)-এর মাজার এলাকায় ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন চালু হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মক’র্তা বিধায়ক রায় বলেন, ‘আম’রা একটি আধুনিক সিলেট গড়ার প্রত্যয়ে মাঠে নেমেছি। ধীরে ধীরে আম’রা একটি সত্যিকারের বসবাসযোগ্য সিলেট নগরী গড়ে তুলতে পারব।’

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘হ’জরত শাহ’জালাল (রহ.) মাজার এলাকা থেকে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের সফল সরবরাহ চালু হয়েছে। উন্নত রাষ্ট্রের আদলে দেশের প্রথম ভূগর্ভে বিদ্যুৎ লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তুলে নেওয়া হচ্ছে রাস্তার দুপাশের বিদ্যুতের খুঁটি ও অন্যান্য সার্ভিসেস লাইনের তার। ফলে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হয়েছে শাহ’জালাল মাজার এলাকা। বেড়েছে এই এলাকার সৌন্দর্য।’