Home > আন্তর্জাতিক > ট্রাম্পের অবরোধের হুমকি, চীনের বিরোধিতা

ট্রাম্পের অবরোধের হুমকি, চীনের বিরোধিতা

ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর ইরাকের বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওদিকে মার্কিন কোন স্বার্থের ওপর ইরান হামলা চালালে তার কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি আগেই। রোববার (৫ জানুয়ারি) দিনশেষে ইরান ও ইরাককে উদ্দেশ্য করে তিনি ওই সতর্কবার্তা দেন। কিন্তু এর বিরোধিতা করেছে চীন। তারা বলেছে, হুমকি হিসেবে খেয়ালি অবরোধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে চীন।

ইরান তার পারমাণবিক সীমা অতিক্রমের হুমকি দিয়েছে। ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য এখন যেন একটি বারুদের বাক্সে পরিণত হয়েছে। এতে সামান্য একটু ত্রুটি-বিচ্যুতিতে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। তা থেকে এই যুদ্ধ বিস্তৃত হতে পারে বিশ্বজুড়ে। যুদ্ধের এমন আশঙ্কায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে। ইরাক ও ইরানে কর্মরত রয়েছে ফিলিপাইনের কমপক্ষে ৭ হাজার নাগরিক। তাদেরকে উদ্ধারে নোটিশমাত্র মোতায়েন করার জন্য বিমান ও জাহাজ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যের এ পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে তাদেরকে উদ্ধারে এমন নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এপিকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ।

এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত তা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে প্রবাসী বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে উদ্ধারে একই রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে এশিয়ার অন্য দেশগুলো। ইরাকে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ১৬০০ কর্মী। তাদের বেশির ভাগই কাজ করেন অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। তাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে এখনো ওই অঞ্চল থেকে নাগরিকদের উদ্ধারের কোনো পরিকল্পনা নেয়নি ভারত। এ কথা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার। সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকর অবস্থা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে চীন। একই সঙ্গে সব পক্ষকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিদিনের ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, নিজেদের শক্তির অপচয় না করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। ইরাকের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অবরোধ দেয়ার বিষয়েও মন্তব্য করেছেন গেং শুয়াং। তিনি বলেছেন, হুমকি হিসেবে খেয়ালি অবরোধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে চীন।

ইরাক ও ইরানকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মেক্সিকোও। তারা এসব ঘটনায় লিপ্ত সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়ানোর অনুরোধ করেছে। মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইটে বলেছে, পররাষ্ট্র নীতির সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বিরোধ মিটাতে আলোচনা ও সমঝোতার ওপর জোর দেয় মেক্সিকো। অন্যদিকে উদ্ধার পরিকল্পনা নিয়ে রোববার প্রতিরক্ষা সচিব, শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতের্তে। সিনেটর ক্রিস্টোফার লরেন্স গো বলেছেন, নোটিশ দেয়া মাত্র মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে ইরান ও ইরাক থেকে ফিলিপাইনের প্রবাসীদের উদ্ধারে সামরিক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট দুতের্তে। ফলে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফেলিমন সান্তোস জুনিয়র বলেছেন, ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী উদ্ধারের সম্ভাব্য রুট শনাক্ত করেছে। শুধু ইরাক বা ইরান থেকেই এই উদ্ধারের রুট নির্ধারণ করা হয়নি।

ইসরাইলের মতো স্থান থেকেও উদ্ধারে পন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কোনো অঘটন ঘটলেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা সমৃদ্ধ করবো। প্রতিরক্ষা বিভাগের তথ্যে বলা হয়েছে, ইরাক ও ইরানে কমপক্ষে ৭ হাজার ফিলিপিনো কর্মীও তাদের ওপর নির্ভরশীল রয়েছেন। এ ছাড়া আছেন বাগদাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের বিভিন্ন স্থাপনা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। তবে আরব উপসাগরীয় দেশগুলোতে যে পরিমাণ ফিলিপিনো কাজ করেন ইরান ও ইরাকে আছেন তাদের ছোট্ট এক ভগ্নাংশ। উল্লেখ্য, ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনায় ফুটছে। ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান। তারা প্রতিশোধের নেয়ার হুমকি দিয়েছে। ওদিকে সোলাইমানিকে হত্যার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন যেসব যুক্তি দেখাচ্ছে, তা নিয়েও নানা সমালোচনা তৈরি হয়েছে।