Home > আন্তর্জাতিক > যশোরে কৃষকের খেতজুড়ে বেগুনি রংয়ের বাঁ’ধাকপি

যশোরে কৃষকের খেতজুড়ে বেগুনি রংয়ের বাঁ’ধাকপি

সুন্দরের কোনো স্থান ও কাল নেই। সুন্দর বিচিত্র। সবুজ পাতার ভেতরে বেগুনি রং। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সারিবদ্ধ ফুল ফুটে আছে।তবে এটা কোনো ফুল নয়। যশোর সদর উপজে’লার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে সারিবদ্ধভাবে ফুটে আছে শত শত বাঁ’ধাকপি।যশোরে প্রথম এই বেগুনি রংয়ের বাঁ’ধাকপি চাষ হচ্ছে। সাফল্যও পাচ্ছেন চাষিরা।

শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে বাঁ’ধাকপি অন্যতম। বাঁ’ধাকপির ইংরেজি নাম ক্যাবেজ এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম ব্রারাসিকা ওলেরাসিয়া। বাঁ’ধাকপি বিভিন্ন রংয়ের হয়ে থাকে যেমন গাঢ় সবুজ, হালকা সবুজ, সাদা, লাল ও বেগুনি।বেগুনি বাঁ’ধাকপি যা লাল বাঁ’ধাকপি হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ভিটামিন এ, সি এবং কেসহ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে। এতে রয়েছে মিনারেলস, পটাসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। সেই সাথে লাল বাঁ’ধাকপিতে প্রচুর পরিমানে বেটা ক্যারোটিন যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

এ ইউনিয়নের কৃষক আমিন উদ্দিন জানান, তিনি তার দুই বিঘা জমিতে বাঁ’ধাকপি চাষ করতে খরচ করেছেন প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে তিনবারে তিনি এক হাজার বাঁ’ধাকপি বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। তিনি প্রতি কেজি ২২ টাকা দরে বাঁ’ধাকপি বিক্রি করেছেন। এখনো তার খেতে ৯ হাজার বাঁ’ধাকপি রয়েছে।আমিন উদ্দিন আরো জানান, ভারতে বেড়াতে গিয়ে তিনি এই বাঁ’ধাকপির বীজ কিনে এনেছিলেন। দেশে এই জাতের বাঁ’ধাকপির চাষ তিনিই প্রথম করেছেন বলে দাবি করেন।

আরেক সবজি চাষি মনোয়ার হোসেন মিন্টু জানান, তারা প্রথমবারের মতো এই বাঁ’ধাকপি চাষ করে বেশ সাড়া পেয়েছেন। তিনি আরো জানান, সাধারণ বাঁ’ধাকপির চেয়ে এই কপিতে বেশি দাম পাচ্ছেন। আবার ওজনেও বেশি।চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের জগহাটি ব্লাকের উপসহকারী কৃষি কর্মক’র্তা জহিরুল ইস’লাম বলেন, ‘বর্তমানে রেড় জুয়েল ও রুবি কিং নামের দুটি জাতের বেগুনি রংয়ের বাঁ’ধাকপি উৎপাদিত হচ্ছে। যশোরে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের আমিন উদ্দিন গত বছর ভারত থেকে এ জাতের বীজ আনেন। বাণিজ্যিকভাবে ২০১৯ সালেই প্রথম ১২ বিঘা জমিতে এ সবজি চাষ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এ বছর আমিন উদ্দিন, বাবু এবং মিন্টু দুই বিঘা জমিতে, বাগডাঙ্গার মনোয়ার হোসেন, শহিদুল ইস’লাম এবং আব্দুল মান্নান এক বিঘা জমিতে বেগুনি রংয়ের বাঁ’ধাকপির চাষ করেছেন।’জহিরুল ইস’লাম জানান, এ জাতের বাধাঁকপির ফলন বেশি হয়। এ সবজি চাষের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন সময় পরাম’র্শ দিয়ে সহযোগিতা করায় এ বছর ভালো ফলনও হয়েছে।আগামী বছর বেগুনি বাঁ’ধাকপি চাষের পরিমাণ আরো বাড়বে আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, সবুজ বাঁ’ধাকপি হেক্টরে ৭০ থেকে ৮০ টনউৎপাদিত হলেও বেগুনি বাঁ’ধাকপি উৎপাদন হয় ৯০ থেকে ১০০ টন।বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করলেও সবজির উৎপাদন এখনো তার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিওএই) কর্মক’র্তাদের মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন শাক-সবজির উৎপাদন হয়েছিল। আর ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল এক কোটি ৯৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫৫ মেট্রিক টন।সেইসাথে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৬ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়েছিল।অধিদপ্তরের বার্ষিক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক কোটি ৯৯ লাখ ৪৮ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ১০ লাখ ৪১ হাজার ৪০৬ মেট্রিক টন সবজি। সূত্র: ইউএনবি