Home > জাতীয় > সারাদেশ > ভিক্ষুক মায়ের ‘টাকার বস্তা’ ফেরত পেল মেয়ে

ভিক্ষুক মায়ের ‘টাকার বস্তা’ ফেরত পেল মেয়ে

আনোয়ারা বেগম (৬৫) পেশায় একজন ভিক্ষুক ছিলেন। শ্রবণ ও মানসিক প্রতিবন্ধী এই নারী ভিক্ষা করতেন কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌর বাজার ও রেল স্টেশন এলাকায়। আনোয়ারা বেগম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার শশীধরপুর এলাকার মৃত তোফা মিয়ার স্ত্রী ছিলেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঠাঁই হয় মিরপুর রেল স্টেশনে। সারাদিন মিরপুর বাজার ও রেল স্টেশনে ভিক্ষা শেষে রাতে সেখানেই ঘুমাতেন তিনি।

গত ২২ ডিসেম্বর সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর ‘রূপসা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি কুষ্টিয়ার মিরপুর স্টেশন অতিক্রম করার সময় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আনোয়ারা বেগম।

সারাদিন ভিক্ষাবৃত্তি করে সে টাকা জমিয়ে রাখতো মিরপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বাজার সংলগ্ন পৌর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ফাস্টফুড ব্যবসায়ী মোস্তফা মল্লিক (৫৮)এর কাছে। টাকাগুলো একবারো খুলেও দেখেনি মোস্তফা মল্লিক। আনোয়ারা বেগম দিন শেষে যেভাবে টাকাগুলো দিতেন ঠিক সেভাইবেই একটি প্লাস্টিকের বস্তায় রাখতেন মোস্তফা মল্লিক। এ কথা মোস্তফা মল্লিক আর আনোয়ারা বেগম ছাড়া কেউ জানতেন না।

এর মধ্যে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায় বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম। তার জমানো টাকাগুলো রয়ে যায় মোস্তফা মল্লিকের কাছে। বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে তার আমানতের টাকা নিয়ে চিন্তায় পড়ে মোস্তফা মল্লিক। অবশেষে সন্ধ্যান পান মৃত আনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুনকে। শিরিনা খাতুনের হাতেই মায়ের রেখে যাওয়া আমানত ফেরত দিলেন ফাস্টফুড ব্যবসায়ী মোস্তফা মল্লিক।

মোস্তফা মল্লিক জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ মহিলা আনোয়ারা বেগম দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষা করে যা পেতেন একটা টুপলি করে আমার কাছে আমানত হিসাবে রাখতেন। সে যেভাবে দিতো আমি সেভাবেই রেখে দিতাম। কোনদিন খুলেও দেখিনি। হঠাৎ ২২ ডিসেম্বর ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায় আনোয়ারা। এরপর আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি তার আমানতের টাকার পুটলিটি নিয়ে। অনেক খোঁজ করে তার একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুনকে পাই।

শুক্রবার (৩ জানুযারি) দুপুরে তার মেয়ের হাতে মায়ের রেখে যাওয়া টাকাসহ ব্যাগটি তুলে দেন তিনি। এসময় দেখা যায় ওই ব্যাগে ১৪ হাজার ৯শ’ টাকা ছিল। পুরো টাকাটা তার সন্তানের হাতে তুলে দিতে পেরে নিজেকে খুব হালকা লাগছে বলে জানান তিনি।

আনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুন জানান, আমার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এই মিরপুর বাজারে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষার টাকাটা ফাস্টফুড ব্যবসায়ী মোস্তফা মল্লিকের কাছে রাখতেন। বিষয়টি আমরা জানতাম না। মোস্তফা মল্লিকই স্ব-ইচ্ছায় মায়ের রেখে যাওয়া টাকাটা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন।

মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী আলম মন্ডল জানান, আনোয়ারা বেগমের গচ্ছিত ১৪ হাজার ৯শ’ টাকা তার মেয়ে শিরিনা খাতুনের হাতে তুলে দিয়ে মস্তফা মল্লিক এক মহানুভবতার পরিচয় দিলেন।