যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের জাফরনগর গ্রামের মৃত অহেদ আলীর ছেলে মোসলেম আলী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চাপাবাড়িয়া ও ব্যারাকপুর যুবশিবিরে। সম্মুখযুদ্ধ করেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তারপরও ঘুষ দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠেনি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মোসলেম মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে চান। তার ভাষায়, তাহলে মরেও শান্তি পাবেন তিনি।
মোসলেম ১৯৭১ সালে যুদ্ধের শুরুতে ইপিআরদের সাথে যোগ দিয়ে ছাগলের ব্যাপারী সেজে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়িয়ে এলাকার খোঁজখবর সংগ্রহ করে বাহিনীকে জানাতেন। পরে সরাসরি যোগ দেন যুদ্ধে। কিন্তু স্বীকৃতি পাননি রণাঙ্গনের এ যোদ্ধা। ঝিকরগাছা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কর্মকর্তারা টাকা চেয়েছিলেন নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠেনি মোসলেমের।
২৭ বছরের যুবক মোসলেম দেশকে পরাধীনতার গ্লানিমুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে মাতৃভূমি স্বাধীনতার লাল সূর্য পেলেও এখন ভাগ্যযুদ্ধে পরাজিত তিনি। দিনমজুর মোসলেমের আর খেত-খামারে কাজ করার সক্ষমতা নেই। রোগাক্রান্ত হয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। তিন সদস্যের পরিবারে তার সম্বল মাত্র চার শতক বসতভিটা আর টিনের একটি দোচালা ঘর।
মোসলেম জানান, সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চাপাবাড়িয়া প্রশিক্ষণ শিবিরে যান তিনি। সেখানকার যুবশিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত সনদ অনুযায়ী তার পরিচয়পত্র নম্বর- ৩৮৪৩০। ব্যারাকপুর যুবশিবিরের ডেপুটি ক্যাম্প ইনচার্জ আমির আলী (মেজর) স্বাক্ষরিত সনদ অনুযায়ী তার মুক্তিবার্তা (লাল বই) নম্বর-০৪০৫০৬০১৮৫। এসব শিবিরে প্রশিক্ষণ শেষে যশোরের ঝিকরগাছার বেনেয়ালী, শার্শার সাড়াতলা ও কাশিপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
যুদ্ধকালীন ফিল্ড কমান্ডার ও ঝিকরগাছা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘মোসলেম আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে ট্রেনিং ও যুদ্ধ করেছে। অথচ তার তালিকাভুক্ত হতে না পারাটা খুবই কষ্টদায়ক।’
সুত্রঃ ইউ এন বি