Home > জাতীয় > দলীয় এমপিদের আমলনামা দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

দলীয় এমপিদের আমলনামা দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

আগামী নির্বাচনে বিতর্কিত এমপিদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কে কী করছে তার সব তথ্য আমার কাছে আছে। যাদের বদনাম আছে, নানা অপকর্মে নাম জড়িয়েছে, তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। জনগণের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, জনগণের পাশে যারা দাঁড়ায় তারাই নমিনেশন পাবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন, এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই তাদের দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারি দলের প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় দলের ষষ্ঠ এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিরোধী দলের আন্দোলনসহ সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও বক্তব্য দেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় এমপিদের সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচন কঠিন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে জানিয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কারও দায়িত্ব নিতে পারব না। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিচ্ছি। সবার আমলনামা আমার কাছে আছে। মাঠ জরিপের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

এলাকার উন্নয়নে বৈষম্য না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজ নিজ এলাকায় সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা চলবে না।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সবাইকে এলাকামুখী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে হলে জনগণের ঘরে ঘরে, দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। জনগণের দ্বারে দ্বারে না গেলে জনগণ ভোট দেবে না। সেজন্য আমিও মনোনয়ন দেব না। এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আমি পরিবর্তন করে দেব। সবাই নিজ নিজ এলাকায় চলে যাও।’

সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই জনগণের কাছে যাও, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরো। জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে, ব্যাপক প্রচার করতে হবে। কারণ, প্রচার না করলে জনগণ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবে।’

বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি যদি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে তাহলে সমস্যা নেই, তাদের বাধা দেওয়া হবে না। আর আন্দোলনের নামে যদি জ্বালাও-পোড়াও এবং মানুষ হত্যা করে তবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’

সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের এমপিরা প্রধানমন্ত্রীকে জেলা সফরের অনুরোধ করেন। জেলা সফরে গেলে সেখানকার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো কেটে যাবে বলে মত দেন তারা। এ ছাড়া দলীয় নেত্রীকে পেয়ে নেতাকর্মীরাও উৎফুল্ল হবেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি সফর শুরু করেছেন। আগামীতেও যতদূর সম্ভব সেটা অব্যাহত রাখবেন। আর যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে অবশ্যই যাবেন।

বৈঠকে একাধিক এমপি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজের অসম বণ্টনের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, ‘মন্ত্রীরা অন্য এলাকার দিকে না দেখে কেবল নিজের এলাকার দিকে গুরুত্ব দেন। মন্ত্রণালয়ের কাজ যেন সব এলাকায় সমানভাবে হয়। মন্ত্রীরা যেন স্বজনপ্রীতি করে নিজের এলাকার ওপর বেশি গুরুত্ব না দেন।’ এ ছাড়া কয়েকজন এমপি নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প গ্রহণ না করার পক্ষে অভিমত দিয়ে চলমান প্রকল্পগুলো নির্বাচনের আগে শেষ করার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি ভাঙাচোরা সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের অনুরোধ করেন।

এমপিরা জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। কিছু ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক জবাবও দিয়েছেন। আবার কিছু বিষয়ে তিনি নোট নিয়েছেন।

বৈঠকে শাজাহান খান, আবুল কালাম আজাদ, আ স ম ফিরোজ, সাদেক খান, আতিউর রহমান আতিক, মেহের আফরোজ চুমকি, মেরিনা জাহান, খোদেজা নাসরিন, শিউলী আজাদ, জাকিয়া পারভীনসহ কয়েকজন বক্তব্য দেন।