Home > জাতীয় > প্রেমিকার মাকে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে গিয়ে প্রাণ হারালো কলেজছাত্র

প্রেমিকার মাকে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে গিয়ে প্রাণ হারালো কলেজছাত্র

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ভালোবাসার প্রমাণ দিতে প্রাণ গেল কলেজছাত্রের! প্রেমিকার মায়ের কাছে ভালোবাসার জন্য প্রেমিক আকুতি জানালে প্রেমিকার মা তার মেয়েকে কতটা ভালবাসে তা প্রমাণ করার জন্য বিষ পানের আহ্বান জানালে বিষ পান করে। অবশেষে ভালোবাসার বিষে প্রাণ গেল হতভাগা এক কলেজছাত্রের। ভালবাসার এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় শ্রীমঙ্গলসহ পুরো জেলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

জানা গেছে, শহরের সুরভীপাড়া এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র জুনেদ রহমানের সাথে উপজেলার মোহাজেরাবাদ গ্রামের হামিদ উল্লার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সাথে ৪ বছর ধরে চলছিল প্রেমের সম্পর্ক। তবে এ প্রেমের সম্পর্ক মেয়েটির পরিবার কখনও মেনে নিতে পারেনি। গত কয়েকদিন আগে পারিবারিকভাবে জুনেদের বিয়ের কথা বার্তা চলছিল, এমন খবর পেয়ে মেয়েটি জুনেদকে জানিয়ে দেয় অন্যত্র বিয়ে করলে সে বিষপানে আত্মহত্যা করবে। এ নিয়ে জুনেদ দিশেহারা হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মেয়েটির পরিবারও তাকে মেনে নিতে রাজী নয়।

জুনেদের বন্ধুরা জানায়, এনিয়ে প্রমিকা তার মাকে রাজি করাতে তাদের বাসায় যাবার জন্য জুনেদকে বলে। এজন্য শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে জুনেদ, তাদের সাথে নিয়ে মেয়েটির বাড়ি যায়। এ সময় তাদের বাড়ির বাহিরে রেখে জুনেদ বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। জুনেদ ভেতরে গিয়ে মেয়েটির মা’য়ের পা ধরে কাকুতি মিনতি করে তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে বলে। এতে মেয়টির মা কর্ণপাত না করে আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। মেয়েটির মা জুনেদকে বলে তার মেয়েকে সত্যিকারের ভালবাসে কিনা তা প্রমাণ দিতে। কি করতে হবে- জুনেদ জানতে চাইলে মেয়েটির মা তাকে বিষ পান করার আহ্বান জানান। এতে জুনেদ ভালোবাসার মানুষকে পেতে তীব্র আবেগের বসে বাড়িতে রাখা কীটনাশকের বোতল খুলে পান করেন। এতে বিষক্রীয়া শুরু হলে জুনেদ দৌঁড়ে বাহিরে এসে ঘটনা জানায়। এরপর বন্ধুরা তাকে দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল এবং পরে সিলেটের আল-রায়হান হাসপাতালে ভর্তি করান।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুনেদ মারা যায়।

দুপুরে লাশ শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসা হলে শত শত মানুষ সেখানে ভীড় করে। আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের কান্নায় পুরো থানা চত্বরের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। নিহত জুনেদ রহমান শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ছিলেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে- জুনেদের প্রেমিকা জানায়, ঘটনার দিন বিকেলে জুনেদ আমাদের বাসায় এসে দীর্ঘসময় মায়ের পা ধরে কান্নাকাটি করে। এ সময় সে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে মাকে অনুরোধ করে। কিন্তু আমার মা তাকে জানায় তার বাবা মা যেখানে বিয়ে ঠিক করেছে সেখানেই বিয়ে করতে। এতে মা রাজি না হলে সে চলে যায়। বিষপানে আত্মহত্যার খবরটি তারা আজ জেনেছেন।

মেয়েটির মা সেলিনা বেগম বলেন, জুনেদ তাদের বাড়ি আসার সময়, বাড়িতে পুরুষ মানুষ ছিল না। এ ঘটনায় আমরা থানায় একটি জিডিও করি।

এদিকে বিকালে- জুনেদের পরিবার পক্ষে জুনেদের প্রেমিকা, তার বাবা ও মাকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ নিয়ে থানায় আসার খবর পাওয়া গেছে।

শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ন কবির বলেন, এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।