Home > ধর্ম > নবিজীর (সা.) ঘুম কেমন ছিল?

নবিজীর (সা.) ঘুম কেমন ছিল?

ঘুম আল্লাহর নেয়ামত। ঘুমকে মানুষের জন্য বিশ্রাম হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন আল্লাহ। রাতকে করেছেন আবরণ। রাত এবং ঘুম মানুষের সুস্থতার জন্য আবশ্যক প্রয়োজনীয় বিষয়। সুতরাং ঘুমের ক্ষেত্রেও রয়েছে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সুন্নাত আমল ও করণীয়। তাঁর জীবন থেকেই নেওয়া যেতে পারে এ শিক্ষা। কেমন ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘুম? তিনি ঘুমের সময় কী করতে বলেছন?

১. শোয়ার আগে অজু করে নেওয়া

প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা হলো-

‘তুমি যখন বিছানায় শুইতে যাবে, তখন তুমি নামাজের অজুর ন্যায় অজু করে ডান পার্শ্ব হয়ে শুইবে।’

২. বিছানা ঝেড়ে নেওয়া ও দোয়া পড়া

হজরত উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘যখন তোমাদের কেউ বিছানায় শুইতে যাবে, তখন বিসমিল্লাহ বলে সে তার কাপড়ের এক পার্শ্ব দ্বারা বিছানা ঝেড়ে নেবে। কারণ সে জানে না তার অবর্তমানে তার বিছানায় কি হয়েছে। আর যখন শোয়ার ইচ্ছা করবে তখন যেন ডান পার্শ্ব হয়ে শোয় এবং বলে-

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبِّي بكَ وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي، فَاغْفِرْ لَهَا، وإنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بما تَحْفَظُ به عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ

উচ্চারণ : ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বি বিকা ওয়াদাতু ঝাম্বি; ওয়াবিকা আরফাউহু; ইন আমসাকতা নাফসি; ফাগফিরলাহা; ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতম প্রশংসা। হে প্রভু! তোমার নামে আমি আমার পার্শ্বদেশকে শয্যায় স্থাপন করছি; আর তোমরই নাম নিয়ে আমি তাকে উঠাব [শয্যা ত্যাগ করাব]; যদি তুমি [আমার নিদ্রাবস্থায়] আমার প্রাণ কবজ করো; তবে তুমি তাকে রহম করো, আর যদি তুমি তাকে ছেড়ে দাও [বাঁচিয়ে রাখো] তবে সে অবস্থায় তুমি তার হেফাজত করো যেমন-ভাবে তুমি তোমার সৎ বান্দাদেরকে হেফাজত করে থাকো।’ (মুসলিম)

৩. আমল করা

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, প্রতি রাতেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শুইতেন, তখন তাঁর দুই হাতকে একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে তাতে ফুঁ দিয়ে যতদূর সম্ভব তার শরীরে মাসেহ করতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও সামনের অংশ দ্বারা মাসেহ শুরু করতেন এবং অনুরূপ তিনবার করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

৪. দোয়া পড়া

হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছানায় শোয়ার পর বলতেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَكَفَانَا، وَآوَانَا، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهُ، وَلَا مُؤْوِيَ

উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আত্বআমানা; ওয়া সাক্বা-না; ওয়া কাফা-না; ওয়া আনা; ফাকাম মিম্মান লা কাফিয়া লাহু; ওয়া লা মু’য়িয়া।’

অর্থ : প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা সেই মহান রবের জন্য যিনি আমাদের খাওয়ালেন, পান করালেন, আমাদের প্রয়োজন পূর্ণ করলেন এবং আমাদের মুক্তি দিলেন, অথচ এমন বহু লোক আছে যাদের না আছে প্রয়োজন পূর্ণকারী আর না আছে আশ্রয়দাতা।’ (আবু দাউদ, মুসলিম, তিরমিজি)

৫. সফরের ঘুম

হজরত আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরের সময় রাতের শেষ দিকে কোথাও অবতরণ করে শুইলে, ডান পার্শ্ব হয়ে শুইতেন আর ফজরের কিছুক্ষণ আগে শুইলে হাত খাড়া করে তার উপর মাথা রেখে শুইতেন।’ (মুসলিম)

৬. নবিজীর বিছানা

পৃথিবীতে যত মানুষের পদচারণ হয়েছে তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সব নবিদের সরদার হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানা ছিল অতি সাধারণ। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বিছানায় ঘুমাতেন তা ছিল চামড়ার ও তার ভিতরের জিনিস ছিল খেজুর গাছের ছাল।’ (মুসলিম)

৭. হজরত ওমরের কান্না

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ একদল সাহাবি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে প্রবেশ করেন। এমতাবস্থায় নবিজী ঘুরে বসলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পার্শ্বদেশ ও মাদুর বা চাটাইয়ের মাঝে কোনো কাপড় দেখতে পাননি; যার ফলে তাঁর পার্শ্বদেশে মাদুরের দাগ বসে গেছে। এ দৃশ্য দেখে ওমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কেঁদে ফেললেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে ওমর! কেন কাঁদছ?

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমরা জানি আপনি রোম ও পারস্যের রাজার চেয়ে আল্লাহর কাছে অনেক সম্মানিত। তারা এ দুনিয়ায় কত প্রকার সুখ আর আনন্দ ফুর্তি করে যাচ্ছে আর আপনাকে আমরা এ অবস্থায় (কাপড়বিহীন চাটাইয়ের মধ্যে শুইতে) দেখছি!

একথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘হে ওমর! তুমি কি চাও না যে তাদের জন্য দুনিয়ায় হোক আর আমাদের জন্য হোক আখেরাতে?

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হ্যাঁ’; নবিজী বললেন, তবে এরূপই হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এসবই অনুকরণীয় আদর্শ। ঘুমানের শুরু থেকেই সুন্নাতের এসব আমলে উজ্জীবিত হবে মুমিন। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমিন।