Home > জাতীয় > ১০ লাখ রোহিঙ্গার ৩ বছর শেষ: কক্সবাজারকে ‘বাঁচানো’ জরুরী!

১০ লাখ রোহিঙ্গার ৩ বছর শেষ: কক্সবাজারকে ‘বাঁচানো’ জরুরী!

২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্ট। মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সে দেশের সেনারা হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আজ রোহিঙ্গা আগমনের তিন বছর পূর্ণ হলো।

দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে রোহিঙ্গারা। এবারও দিবসটি পালনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও বিগত বছরের মহাসমাবেশের ধাক্কায় এবারে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের ৩৪ টি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও নানা কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ বছর ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ ঠিক হলেও নতুন করে নিপীড়নের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা থেকে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।

শুরুর দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কিছুটা আলাপ আলোচনা হলেও বর্তমানে থমকে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সব ধরনের আলোচনা। মাঝখানে দুই বার সরকারি ভাবে প্রত্যাবাসনের সব আয়োজন হলেও কোন রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি হয়নি নিজ দেশে। বরং জুড়ে দিয়েছে নতুন শর্ত এতে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এদিকে ৩ বছরে রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ডে কেবল অতিষ্ঠ নয় বরং রোহিঙ্গাদের নিয়ে আতংকে দিন কাটছে স্থানীয়দের।

কারণ রোহিঙ্গারাই এখন স্থানীয়দের গুম খুন সহ নানান অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না। আর সব অপরাধ ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত থাকে একটি সুবিধাভোগী মহল। এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগামি দিনের কথা চিন্তা করে রীতিমত অস্থিরতায় আছে স্থানীয়রা। এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের অন্য ভাসানচর সহ অন্য জেলায় বা অন্যকোন দেশে স্থানান্তর করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

গত তিন বছরে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ এবং কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকা সত্তে¡ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের অজুহাতে রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে বার বার প্রত্যাবাসন আটকে রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘস্থায়িত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাস্তবে আগ্রহী না হলেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা ছলচাতুরি করছে।

রোহিঙ্গা মনে করেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্য এখনো নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়নি। আবার সেখানে ফিরে গেলে মিয়ানমার তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে না এবং অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের জন্য তৈরি করা ক্যাম্পে প্রায় জিম্মি অবস্থায় তাদের রাখা হবে। এ ধরনের নানা রকম অবিশ্বাস কাজ করছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।

দাবীর মধ্যে রয়েছে- ১. রোহিঙ্গারা আরাকানের স্থানীয় আদিবাসী এবং সে জন্য তাদের ন্যাটিভ স্ট্যাটাস বা স্থানীয় মর্যাদা সংসদে আইন করে পুনর্বহাল করতে হবে যার আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি থাকতে হবে। ২. নাগরিকত্ব: প্রথমত, আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ‘সিটিজেন কার্ড’ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সিটিজেনশিপ কার্ড দিয়ে প্রত্যাবাসন করে স্থানীয় নাগরিক মর্যাদা দিতে হবে। তৃতীয়ত, একই সাথে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় থাকা রোহিঙ্গাদের সিটিজেনশিপ কার্ড দিয়ে স্থানীয় নাগরিক মর্যাদা দিতে হবে।

৩. প্রত্যাবাসন : রোহিঙ্গাদের তাদের নিজস্ব গ্রামে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া জমিজমা যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে হবে। ৪. নিরাপত্তা: আরাকানে রোহিঙ্গাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য রোহিঙ্গা পুলিশ বাহিনীর সাথে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী বাহিনী মোতায়নে করতে হবে। ৫. জবাবদিহিতা : বার্মার স্থানীয় আদালতের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির মতো কোনো ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনালে অপরাধীদের বিচার করতে হবে।

টেকনাফ রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে উখিয়া টেকনাফের ১২ টি পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। আগে আসা রোহিঙ্গা সহ বর্তমানে ৩৪ টি ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যেটা পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ইতি মধ্যে ঘোষণা হয়েছে। আমরা দেখেছিলাম সরকার প্রথম দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কয়েকটি চুক্তি করেছিল মিয়ানমারের প্রতিনিধি এসেছিল, বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিয়ানমারে গিয়েছিল প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছিল কিন্তু সম্প্রতি বছর খানেক ধরে সেই আলোচনাও আর দেখা যাচ্ছেনা।

আর রোহিঙ্গাদের কারণে এখন স্থানীয়রা আতংকে দিন কাটাচ্ছে। কারণ তারাই এখন স্থানীয়দের অপহরণ করে গুম খুন করতে দ্বিধা করছেনা। টেকনাফের যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক, উখিয়ার ব্যবসায়ি সহ অসংখ্য স্থানীয়দের অপহরণ করে হত্যা সহ চাঁদা আদায় করেছে রোহিঙ্গারা কিন্তু সেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কি বা ব্যবস্থা নিয়েছে ? বরং সুবিধাভোগী মহলের পৃষ্টপোষকতায় তারা পার পেয়ে গেছে। এখন আমাদের রোহিঙ্গাদের সমীহ করে চলার মত অবস্থা হয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। তাই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত ভাসানচর সহ অন্য জেলায় বা তৃতীয় কোন দেশে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার দাবী জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না এটা ঠিক না। উচ্চ পর্যায়ে সব সময় এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির কারণে সব কিছুতে স্থবিরতা বিরাজ করছে সে হিসাবে হয়তো প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা বেশি প্রচার পাচ্ছে না। তবে আমরাও চাই দ্রæত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হউক। কারণ কক্সবাজারকে বাঁচাতে হলে রোহিঙ্গা প্রত্যবাসনের কোন বিকল্প নেই।