Home > জাতীয় > হঠাৎ রাজধানীতে দুই কক্ষের বাসার চাহিদা তুঙ্গে

হঠাৎ রাজধানীতে দুই কক্ষের বাসার চাহিদা তুঙ্গে

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অর্থনৈতিক স্থবিরতায় পাল্টে গেছে মানুষের জীবন ও জীবিকা। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও অ-প্রাতিষ্ঠানিক বা বেসরকারি খাতের চাকুরেদের জীবনে নেমে এসেছে বিভীষিকা। কারো চাকরি নেই। কেউ চাকরি করলেও পাচ্ছেন না বেতন। কারো চাকরি থাকলেও পাচ্ছেন অর্ধেক বেতন। কেউ খরচ সামলাতে না পেরে রাজধানী ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন গ্রামে।

গত জুলাইয়ে পাওয়া বি-প্রপার্টি রেন্টাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, খরচ কমাতে গত মার্চ মাস থেকে রাজধানীর মানুষ দুই শয়নকক্ষের বাসা খুঁজছে। মূলত ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে এক হাজার থেকে দেড় হাজার বর্গফুটের বাসার চাহিদা বেড়েছে।

ওয়েবসাইট ট্রাফিকে তথ্য বিশ্লেষণ করে বি-প্রপার্টি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১৬ হাজার ভাড়াটিয়া নতুন বাসা খুঁজেছে। তবে দুই কক্ষের বাসা খুঁজেছে হাজারের বেশি মানুষ। জুলাই মাসে নতুন বাসা খুঁজেছে চার হাজারের বেশি মানুষ।

গত ১০ আগস্ট চট্টগ্রামের আবাসন চাহিদার ওপর বি-প্রপার্টি ট্রেন্ড অ্যানালিসিস প্রকাশ করেছে। গত ছয় মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে চাহিদা বিশ্লেষণ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের মানুষ ছোট বাসা খুঁজছে বেশি। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৪২.৮৪ শতাংশ মানুষ ১০০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুটের বাসা বেশি খোঁজ করেছে। আর ৩৮.৭৫ শতাংশ মানুষ ১০০০ বর্গফুটের কম আয়তনের বাসা খুঁজেছে। এ ছাড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ স্কয়ার ফুট আয়তনের বাসা খুঁজেছে ১৫.৩৪ শতাংশ মানুষ। কক্ষের সংখ্যা বিবেচনায় চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে তিন কক্ষের বাসার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ওই সময়ে যারা বাসা খুঁজেছে তাদের ৪৫.৮০ শতাংশই তিন কক্ষের বাসা চেয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির এমন তথ্য জানার পর রাজধানীর আজিমপুর, ধানমণ্ডি, লালবাগ, পুরান ঢাকা ও রামপুরা এলাকায় কয়েক দিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাসায় ঝুলছে ‘টু-লেট’।

লালবাগ কেল্লার পাশে তিনটি বাড়ির মালিক নান্নু মিয়া। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে কথা হয়। নান্নু মিয়া জানান, গত মার্চ মাস থেকে তাঁর ১০ জন ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে দিয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাট তিন কক্ষের, আর খাবার কক্ষও রয়েছে। ভাড়া ২০-২৫ হাজার টাকার মধ্যেই। করোনায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একদফা ২০০০ হাজার টাকা করে ভাড়া কমিয়েছেন তিনি। তবুও এখন বাসা ফাঁকা রয়েছে। নতুন ভাড়াটিয়া এলেও দুই কক্ষের বাসা খুঁজছে তারা।

একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করেন সেলিম আহমেদ। তিন মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে তেমন কাজ নেই। কিছু প্রকল্প চলমান থাকলেও থমকে গেছে অনেক প্রকল্প। করোনা মহামারিতে গত এপ্রিল থেকে বেতন অর্ধেক করা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ৩০ হাজার টাকা বেতন পেতেন তিনি। যা দিয়ে সংসার চলত। কিন্ত এখন বেতন অর্ধেক করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন। তিনি বলেন, বেতনের বড় অংশ বাসা ভাড়াতে চলে যায়। আয় কমে যাওয়ায় এখন ছোট বাসা খুঁজছি।’

এ বিষয়ে বি-প্রপার্টির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক নসওয়ার্দি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন প্রপার্টি ভাড়া খাতে এত পরিবর্তন তা সহজেই বোধগম্য। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি এই শহরে বসবাসরত প্রায় সবার জীবনযাত্রার ওপরেই প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই তাদের জীবনযাত্রার খরচ কমাতে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ার বাড়িতে উঠছে।’

বি-প্রপার্টি বলছে, শ্যামপুর, খিলক্ষেত, মানিকনগর. কাফরুল, দক্ষিণখান, আগারগাঁও ও হাজারীবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার চাহিদা বেড়েছে। তবে উত্তরা, বসুন্ধরা আবাসিক ও মোহাম্মদপুর এখনো গ্রাহকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।