Home > অন্যান্য > শিক্ষক-ছাত্রীর পুরনো ভিডিও ভাইরাল, ব্যবস্থা নিতে আদালতের নির্দেশ

শিক্ষক-ছাত্রীর পুরনো ভিডিও ভাইরাল, ব্যবস্থা নিতে আদালতের নির্দেশ

প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সংবাদ দেখে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্ব-প্রণোদিত হয়ে আদেশ দিয়েছেন আদালত। বরিশালের উজিরপুর আমলি আদালতের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম বুধবার স্ব-প্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। সেই আদেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপারকে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর আগে গোপনে ধারণ করা ভিডিওটি ১০ জুলাই নতুন করে ভাইরাল হয়েছে।

যারা ভাইরাল করেছেন, তারা নতুন করে প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন। যদিও ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হক সরদারের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) স্থগিত রয়েছে।

সম্প্রতি উজিরপুর উপজেলার সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হক সরদার কয়েকজন ছাত্রীকে নিয়ে কোচিং করাতে দেখা যায়। ভিডিওর মাঝে কয়েকবার ওই শিক্ষককে এক ছাত্রীর শরীরে আপত্তিকরভাবে হাত দিতে দেখা যায়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ২০১৬ সালের দিকের বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল বিদ্যালয় থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে শিকারপুর বন্দরে। সেখানে ওই শিক্ষকের একটি কোচিং সেন্টার ছিল। ঘটনার পর থেকে কোচিং সেন্টারটি বন্ধ রয়েছে।

সেই সময় ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সমালোচনার মুখে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. নুরুল হক সরদারকে বরখাস্তের দাবি তোলা হয়। এমনকি আপত্তিকর ভিডিও জেলা মহিলা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হক সরদারের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় তার এমপিও স্থগিত করা হয়। প্রায় চার বছর ধরে তার এমপিও স্থগিত রয়েছে। আগামী দু্ই ছরের মধ্যে তিনি অবসরে যাচ্ছেন। তবে বর্তমানে তিনি সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ভিডিও ভাইরাল নিয়ে দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকসহ স্থানীয় দুটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। সেই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসে। সেই ঘটনার সূত্র ধরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্ব-প্রণোদিত হয়ে আদেশ দিয়েছেন আদালত। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম যখন আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন আদলতে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। বিচারক তাঁর সেই আদেশে বলছেন, প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে নেতিবাচক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত বিষয়ে সঠিক তদন্ত না হলে শিক্ষক শ্রেণির জাতি গঠনে তাঁদের অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। ওই ঘটনার পর উজিরপুর থানা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ কারণে আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে যৌন হয়রানির বিষয়ে পিবিআই কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আদেশ প্রদান করা সমীচীন বলে প্রতীয়মান হয়।

সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা শিকারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগের পুরাতন ঘটনা। ওই ঘটনার পর মহিলা পরিষদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় সেই থেকে প্রধান শিক্ষকের বেতনের সরকারি অংশ (এমপিও) স্থগিত রয়েছে। সম্প্রতি পুরাতন ভিডিওটি নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। ওই ঘটনার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁর দপ্তরে আমাদের ডেকেছিলেন। আমাদের বক্তব্য নিয়েছেন। এমনকি পুলিশ প্রশাসন থানায় নিয়ে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

তিনি আরো বলেন, প্রায় তিন বছর হলো সভাপতির দয়িত্ব নিয়েছি। তা ছাড়া কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগও করেনি। তাই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

উজিরপুর থানার ওসি জিয়াউল আহসান বলেন, শিক্ষক-ছাত্রীর পুরনো ভিডিও নতুন করে ভাইরাল হওয়ার পর প্রধান শিক্ষককে থানায় ডেকেছিলাম। তিনি বলেছেন, প্রায় পাঁচ বছর আগেরকার ঘটনা। সেই ঘটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর তাঁর সরকারি বেতন স্থগিত করেছে।