Home > অন্যান্য > ঢাকা ছেড়েছে দেড় লাখ পরিবার, বাসায় বাসায় টু-লেট

ঢাকা ছেড়েছে দেড় লাখ পরিবার, বাসায় বাসায় টু-লেট

করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে, নেমে গেছে দরিদ্রের কাতারে। অবস্থার চাপে অনেকেই বাসা ছেড়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে।

ছেড়ে দিয়েছে রাজধানীও। আবার রাজধানীতেই টিকে থাকার জন্য অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার কম টাকার বাসায় যাচ্ছে।

বলা হচ্ছে, এরই মধ্যে প্রায় দেড় লাখ ভাড়াটিয়া রাজধানী ছেড়েছে। এ কারণে রাজধানীর অলিগলিতে এখন ঝুলছে অসংখ্য ‘টু লেট’। অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাচ্ছে না।

ভাড়াটিয়া পরিষদ জানায়, ‘করোনাকালে এখন পর্যন্ত ঢাকায় বাসা ছেড়েছে দেড় লাখের বেশি পরিবার। যাদের বেশিভাগই মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাকালে কাজ হারানো রাজধানীর লাখো মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন।

গত তিন মাসে অর্থনৈতিক শ্রেণি কাঠামোতেও বদল এসেছে। এ সময়ে নিম্ন-মধ্যবিত্ত নেমেছে নিম্নবিত্তে আর নিম্নবিত্ত আরও দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এদের বেশিরভাগই খেয়ে-পরে কোনোরকম টিকে থাকলেও বাড়িভাড়া নিয়ে বড় চাপে পড়েছেন।

পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে মেসে উঠছেন। এ অবস্থায় ঢাকার বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়া সংকটে পড়েছেন। অধিকাংশ বাসার সামনে বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন ঝুলছে।

বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা সংকটে গত ২৬ মার্চ দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হলে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান। তাদের বেশিরভাগ এখনো ফেরেননি। তবে তাদের অনেকেই এতদিন বাড়িভাড়া পরিশোধ করেছেন।

সাধারণ ছুটি শেষ হলেও পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ায় অধিকাংশই বাসা ছেড়ে দেন। আবার যারা এতদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় ছিলেন তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় তারা বাসা ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর অধিকাংশ বাড়িওয়ালা।

রাজধানীর বাসিন্দাদের ৮০ শতাংশই ভাড়া বাসায় থাকেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক হিসাবে দেখা যায়, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ।

একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ।

সংগঠনটির অন্য এক হিসাব বলছে, ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া প্রায় ৫০ শতাংশ, ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাসা ভাড়ায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে রাজধানীতে লোকসংখ্যা ছিল ৬৮ লাখের সামান্য কিছু বেশি। কিন্তু ১৯৯১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে রাজধানীর লোকসংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে।

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টাসের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাসিন্দা ১ কোটি ৭০ লাখ।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের তথ্য বলছে, ২০০৭ সালের পর খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা কারণে দেশের ভেতর উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ।

এসব মানুষের অধিকাংশই কর্মের সন্ধানে ঢাকায় প্রবেশ করে। যারা রাজধানীর বস্তিগুলোতে বাস করে আসছিল। তবে করোনার ধাক্কায় এসব মানুষের জীবনে বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে।