Home > বিনোদন > ৮ শতাধিক সিনেমা করেও এখন বেকার গাঙ্গুয়া!

৮ শতাধিক সিনেমা করেও এখন বেকার গাঙ্গুয়া!

ঢাকাই সিনেমা’র জনপ্রিয় অ’ভিনেতা। পর্দায় তার উপস্থিতি ভয়ংকর মানুষ হিসেবে। মন্দ সব কাজকর্ম করে বেড়ান। শেষ দৃশ্যে নায়কের হাতে মা’র খেয়ে করুণ পরিণতি বরণ করেন। তিনি অ’ভিনেতা গাঙ্গুয়া। ভরাট গ*লায় খল চরিত্রে গাঙ্গুয়া অনবদ্য এক অ’ভিনেতার নাম।
সিনেমায় তার শুরুটা মা’রপিট দিয়ে। নাম ছিল পারভেজ চৌধুরী। এরপর আসেন অ’ভিনয়ে। একসময় ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। প্রয়াত অ’ভিনেতা জসিম তার নাম দিলেন গাঙ্গুয়া। সেই নামেই খ্যাতি পান। ৪৩ বছরের ক্যারিয়ারে অ’ভিনয় করেছেন ৮ শতাধিক সিনেমায়।আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) এফডিসিতে এসেছিলেন এই অ’ভিনেতা। ফিল্ম ক্লাবের সদস্য তিনি। ভোট দিলেন। ভোট দেয়া শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন।

গাঙ্গুয়া বলেন, ‘এখন বেকার জীবন পার করছেন। কেউ ডাকে না এখন সিনেমা’র জন্য। সংসার চালাতে এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেজ শো করে দিন পার করছেন।’গাঙ্গুয়া আরও বলেন, ‘৪৩ বছর ধরে সিনেমা’র সঙ্গে আছি। অ’ভিনয় করেছি প্রায় আট শতাধিক সিনেমায়। উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে মাস্তান রাজা, কালিয়া, প্রেম গীত, নূরা পাগ*লা, জ্যান্ত কবর, ক্ষুধার জ্বালা, লাল বাদশা, ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম, তোকে ভালোবাসতেই হবেসহ অসংখ্য ছবি।এখন আর সিনেমা’র সেসব দিন নেই। গত একযুগ ধরে শুধু প্রেমের ছবি বানানো হচ্ছে। ফ্যামিলি ড্রামা’র ছবি কমে গেছে। আগে ফ্যামিলি ড্রামা’র ছবি হতো। সেগুলোতে মানুষ নিজেদের খুঁজে পেত। কিন্তু একঘেয়েমি আসছে প্রেমের ছবিতে। তাই মানুষ ছবি দেখছে না।

এছাড়া হাতের মুঠোয় ইন্টারনেটের কারণে মানুষ সারা’বিশ্বের সবকিছু দেখছে যেটা আগে ছিল না। এসব কারণে মানুষ আর হলে গিয়ে ছবি দেখছে না। এসব কারণেই সিনেমা হয় না এখন। যে কটা সিনেমা হয় সেখানেও ডাক পাই না। অ’ভিজ্ঞতার মূল্যায়ন পেলাম না।’জয়পুরহাটে জন্ম গাঙ্গুয়ার। আটভাই চার বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। চলচ্চিত্রে কাজ করছেন ৪৩ বছর ধরে। প্রয়াত নায়ক জসিম তার নাম পারভেজ চৌধুরী থেকে গাঙ্গুয়া দেন। তিনি বলেন, ‘জসিম ভাই বলেছিলেন এই নাম দিলে ভিলেন হিসেবে আমাকে নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি যা বলেছিলেন তাই হয়েছে। দেশের মানুষের কাছে আমি এ নামেই পরিচিতি পেয়েছি। তিনি আমা’র ওস্তাদ। এরপর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘ম্যাক্সিমাম’ ছবিতে আমি ফাইটে কাজ করেছি।’

বর্তমানে দাঁড়িয়ে জীবনটাকে কী’ভাবে উপলব্ধি করেন? গাঙ্গুয়ার উত্তর, ‘প্রায়ই মনে হয় অ’ভিনয় করতে আসার যোগফল শূন্য। আগে আমাদের লেখাপড়া কম ছিল। না বুঝেই যে কোনো কিছু করতাম। শুধু অ’ভিনয় করে জীবনের শেষে এসে এজন্য ক’ষ্ট সইতে হচ্ছে। অবশিষ্ট বলে কিছু নেই।কারণ অ’ভিনয় সেক্টরে পেনশনের ব্যবস্থা নেই। একজন শিল্পী চলচ্চিত্রে ৫০ বছর কাজের পর আরও ৩০ বছর বাঁচলে ওই পরের সময়টা তার ক’ষ্টে কাটে। কারণ তার সঞ্চয় থাকে না। তবে আমা’র কোনো ক’ষ্ট না নেই। চারপাশে ভাই বন্ধু অনেক ক’ষ্টে আছে। এজন্য মাঝেমধ্যে খুব খা’রাপ লাগে। এত এত বছর একটা সেক্টরে কাজ করে সবাই হাহাকার নিয়ে বেঁচে আছে।’

চলচ্চিত্রে মন্দ মানুষ হলেও বাস্তবে গাঙ্গুয়া ঠিক তার উলটো। তিনি বলেন, ‘আমি নামাজ, রোজা পালন করি। সিনেমা’র বাইরে আর পাঁচটা মানুষের মতো সাধারণ। আমা’র সংসার আছে। একমাত্র মেয়ে লেখাপড়া শিখে একটি ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করে একটি কোরিয়ান স্কুলে শিক্ষকতা করছে।আমা’র স্ত্রী’ গৃহিণীর পাশাপাশি বিউটিশিয়ান। সমস্যাটা হলো আমা’র। অ’ভিনয় ছাড়া আমা’র কোনো পেশা নেই। আর কিছু কাজ জানিও না। স্ত্রী’ মেয়েরা কিছু কাজ করে বলে রক্ষা। সংসার জীবনে আমি ভীষণ সুখী একজন মানুষ। দোয়া চাই, যেন ভালো থাকি।’