প্রতি বছর হজে অংশ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ একত্রিত হন সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে। ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মোট পাঁচদিন চলে হজের মূল কার্যক্রম। হজ শুরুর প্রায় এক দেড় মাস আগে থেকে সৌদি আরবে উপস্থিত হন হজযাত্রীরা। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ‘তামাত্তু হজ’ পালন করে থাকেন। কারণ, এই হজ বেশি সুবিধাজনক।
‘তামাত্তু হজ’
‘তামাত্তু হজ’ বলা হয়, একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্ন করার পর হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়।
তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে শুধু ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফ ও সায়ি করে চুল কেটে বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করতে হবে। এরপর ৭ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সমাপ্ত করতে হবে।
ঢাকা বিমানবন্দরে সবার আগে যা জানতে হবে
হজযাত্রীদের সবার আগে জেনে নিতে সৌদি আরবে তাদের বিমান মক্কায় অবতরণ করবে নাকি মদিনায়। বেশির ভাগ হজ ফ্লাইট মক্কায় অবতরণ করে। এক্ষেত্রে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ইহরামের নিয়ত করা ভালো। কারণ, জেদ্দা পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ (ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থান)।
প্রায় সবগুলো হজ ফ্লাইটে মিকাতের সীমানা পার হওয়ার সময় ইহরামের নিয়ত করার কথা বলা হয় কিন্তু ওই সময় অনেকে ভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আবার কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েন। আর বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এ জন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে। তদুপরি গুনাহ হবে।
তবে যদি হজযাত্রী জানতে পারেন যে সৌদি আরবে তার প্রথম গন্তব্য মদিনায়, তাহলে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ইহরাম করতে হবে না। যখন মদিনা থেকে মক্কায় যাবেন, তখন ইহরাম করতে হবে।
ইহরাম পরিধানের আগে করণীয়
ইহরাম পরিধানের আগে বেশ কিছু করণীয় আছে। এগুলো হলো—ইহরাম পরিধানের আগে সব ধরনের শারীরিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে। যেমন—হাত-পায়ের নখ কাটা, গোঁফ, চুল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি। ইহরাম পরিধানের আগে গোসল করা সুন্নত।
ইহরামের পরিধানের পর লক্ষণীয়
ইহরাম করার পর দুনিয়াবি ও সাংসারিক কাজকর্ম নিষেধ— এসময় সহবাস করা যাবে না, কথা ও কাজে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না, নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না, কোনো ধরনের সুগন্ধি লাগানো যাবে না, কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না; তবে ক্ষতিকারক প্রাণী মারা যাবে। ক্ষতি করে না, এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না।
জেদ্দা বিমানবন্দরে
জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখানে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে হবে। এ সময় ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। কোনও কিছুতে ধৈর্য হারানো যাবে না। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে মুয়াল্লিমের পক্ষ থেকে হজযাত্রীদের গ্রহণ করা হবে।
এসময় আরবিতে লেখা মোয়াল্লেমের নম্বরসহ কবজিবন্ধনী (বেল্ট) দেওয়া হবে, তা হাতে পরে নিতে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র (যাতে পিলগ্রিম নম্বর, নাম, ট্রাভেল এজেন্টের নাম ইত্যাদি থাকবে) গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
এরপর হজযাত্রীরা মক্কায় যে বাড়িতে থাকবেন মুয়াল্লিমের গাড়ি তাদের জেদ্দা থেকে সেখানে নামিয়ে দেবে। জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। চলার পথে তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) পড়ুন।
মক্কায় পৌঁছানোর পর যা করবেন
পবিত্র মক্কা শহরে পৌঁছার পর আপনি এ দোয়া পড়বেন, হে আল্লাহ! আমাকে এ পবিত্র শহরে ঈমান, নিরাপত্তা ও মঙ্গলসহকারে পৌঁছে দিন। নিরাপদে থাকার তাওফিক দিন এবং এ নগরীর সম্মান ও আদব রক্ষার তাওফিক দান করুন।
বিমানের দীর্ঘ সফরের পর শরীরে কিছুটা ক্লান্তিভাব আসাটা স্বাভাবিক। তাই জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছে থাকার জায়গায় মালপত্র রেখে ক্লান্ত থাকলে বিশ্রাম করুন। নামাজের সময় হলে সময়মতো নামাজ আদায় করুন। বিশ্রাম শেষে ওমরাহ পালন করুন, আর দলবদ্ধভাবে ওমরাহর নিয়ত করে থাকলে সবাই মিলে ওমরাহ আদায় করুন।
তবে ওমরাহ পালনের আগে অবশ্যই ওমরাহর নিয়ম এবং এর ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
ওমরাহ পালনে প্রধানত চারটি কাজ। দুইটি কাজ ফরজ— (ক.) ইহরাম পরিধান করা। (খ.) পবিত্র কাবাগৃহ তাওয়াফ করা। আর দুইটি কাজ ওয়াজিব— (ক.) সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সাঈ করা। (খ.) মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা।র