Home > শিক্ষা > রাবিতে ১৪শ কেজির ভাস্কর্যে ৯০৮ কেজি তামাই গায়েব!

রাবিতে ১৪শ কেজির ভাস্কর্যে ৯০৮ কেজি তামাই গায়েব!

বঙ্গবন্ধুসহ তিন বুদ্ধিজীবীর একটি স্মৃতিফলক। তাতেই লুটপাটের মহাযজ্ঞ। স্মৃতিফলক নয়, যেন দুর্নীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে এটি তৈরি করা হয়েছে। স্মৃতিফলকে ১৪শ কেজি তামা ব্যবহারের কথা থাকলেও তাতে মাত্র ৪৯২ কেজি তামা ব্যবহার করা হয়েছে!

বরাদ্দকৃত মূল্যে প্রতি কেজি তামা এক হাজার টাকা হারে শুধু ভাস্কর্য তৈরিতেই দুর্নীতি হয়েছে নয় লাখ আট হাজার টাকা। অর্থাৎ ১৪ লাখ টাকার তামা ব্যবহারের কথা থাকলেও নয় লাখ আট হাজার টাকার তামা ব্যবহারই করা হয়নি। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৮৩ লাখ টাকার পুরো হিসাবেই গড়মিল পেয়েছে তদন্ত কমিটি। আর্থিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির একটি প্রতিবেদনে দুর্নীতির এমন চিত্র উঠে এসেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন ভবনের পশ্চিম পাশে নিচতলায় এ স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে স্মরণ রাখতে এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান প্রশাসন। ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এবং তৎকালীন পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুলতান-উল-ইসলামকে সমন্বয়ক করে মোট ১১ জনকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কাজে দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০১৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৪৭০তম সভায় ৮২ লাখ ৬৫ হাজার ১৬১ টাকার অনুমোদন দেয়া হয় প্রকল্পের জন্য। স্মৃতিফলকে তিনজন শহীদ শিক্ষক এবং বঙ্গবন্ধুর রিলিফ ভাস্কর্য নির্মাণে ১৪শ কেজি তামার জন্য ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু তাতে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র ৪৯২ কেজি তামা!

স্মৃতিফলক নির্মাণে আর্থিক অব্যবস্থাপনার প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেমকে আহ্বায়ক করে ২০১৭ সালে ৩১ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির এক চিঠির জবাবে স্মৃতিফলকের শৈল্পিক পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ঋতেন্দ্র কুমার শর্মা জানান, ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য প্রথমে ৮৫০ কেজি তামা ক্রয় করা হয়। এর মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ ওয়েস্টেজ (নষ্ট) দেখিয়ে ৬৩৮ কেজি তামা ব্যবহার করা হয়। এরপর কাস্টিংয়ের সময় ‘দুর্ঘটনাজনিত’ কারণে ফের ১২০ কেজি তামা নষ্ট হয়। সবশেষে আরও ২৬ কেজি তামা অন্যভাবে নষ্ট হয়। এতে মোট ৯০৮ কেজি তামাই বাদ পড়ে যায় ভাস্কর্য নির্মাণে, যার আর্থিক মূল্য নয় লাখ আট হাজার টাকা।

স্মৃতিফলকে শৈল্পিক কাজের টেম্পার্ড গ্লাসের জন্য তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা ব্যবহারের কোনো তথ্য পায়নি তদন্ত কমিটি। পুরো প্রকল্পের জন্য লেনদেন প্রক্রিয়ায় ‘মারাত্মক অসঙ্গতি’ আছে বলে তদন্ত কমিটি উল্লেখ করেছে। দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণ প্রকল্পের সমন্বয়ক সুলতান-উল-ইসলামের কাছে আর্থিক অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি হয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছে। আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে যখন কাজটি চলছিল, আমাকে তখন দায়িত্ব দেয়া হয়। তামা ক্রয়ের বিষয়ে আমিও প্রশ্ন তুলেছি।’

তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ইচ্ছামতো কাজ করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে আসলে অভিযোগটি কী-সেটাই স্পষ্ট করে জানতে চাওয়া হয়নি। প্রকল্পটি কমিটি ও উপ-কমিটির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে এখানে জবাব দেয়ার সুযোগ নেই।’

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণের অসঙ্গতি খুঁজে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের আলোকে আমরা ব্যবস্থা নেব। এর চেয়ে বেশিকিছু বলা এখন ঠিক হবে না।’