সম্প্রতি সারাদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুইদিন দিন থেকেই অঝোরে বৃষ্টি ঝরেছে। সেসময় সারাদেশের ন্যায় নোয়াখালীতেও দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়। সেখানে তখন ছিলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেত।প্রান রক্ষায় সবাই ছুটছিলেন নিরাপদ আশ্রয়ে। আর এমন দুর্যোগের মধ্যে গত রোববার (২৩ অক্টোবর) রাতে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন মা ফারজানা। পরক্ষণেই নাম রাখা হলো জান্নাতুল ফেরদৌস সিত্রাং। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবের মাঝে জন্ম নেওয়া এই শিশুটিকে দেখতে তার বাড়ি গিয়েছেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নের চতলার খাল এলাকার শিশুর বাড়িতে পৌঁছান তিনি। এ সময় জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানকে পাশে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন জান্নাতুল ফেরদৌস সিত্রাং এর পরিবার ও আশপাশের মানুষজন। এসময় জেলা প্রশাসক খাদ্য ও নগদ অর্থ পরিবারের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সে যতদিন বেঁচে থাকবে তার খোঁজখবর নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সিত্রাং এর মা ফারজানা আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের বাড়িতে আসবেন তা স্বপ্নেও ভাবি নাই। আমার মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নগদ টাকা ও খাদ্য দিয়েছেন। আমরা সবাই স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।
সিত্রাং এর দাদি নুর জাহান জানান, ডিসি স্যার এই গরিবের বাড়িতে পা দিয়েছেন। আমরা এতেই খুশি। আমাদের খাবার দিয়েছেন এবং নগদ টাকা দিয়েছেন। এছাড়াও ইউএনও স্যারসহ চেয়ারম্যান ছিলেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের নেই। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম হোসেন বলেন, একজন সংগ্রামী মা ফারজানা আক্তার। তিনি যে কঠিন দুর্যোগের সময়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তা অকল্পনীয়। সেই জন্য আজ জেলা প্রশাসক স্যারসহ আমরা এই কন্যা সন্তানকে দেখতে এসেছি।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান এসময় গনমাধ্যমে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে যখন জোয়ারে ঘর ডুবে যায়। এই সংগ্রামী নারী তখন চৌকিতে আশ্রয় নেয়। সেই সময় নেটওয়ার্কসহ সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তার স্বামীও এলাকায় ছিল না। চৌকিতেই সাধারণভাবে ধাত্রীর সহযোগিতায় কন্যা শিশু প্রসব করেন তিনি। ঘূর্ণিঝড়ের নাম অনুযায়ী শিশুটির নামকরণ করেন সিত্রাং। তিনি আরও বলেন, সিত্রাং এর দায়িত্ব আমি নিলাম। তার জন্য আমি নতুন জামা মিষ্টিসহ উপহার এনেছি। এছাড়াও নগদ টাকা তার মায়ের হাতে তুলে দিয়েছি। ইউএনও ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছি। যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাতে বলেছি। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম হোসেন, হরণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসাইনসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।