Home > আইটি > যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বে যেভাবে ধরা খেলো টিকটক

যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বে যেভাবে ধরা খেলো টিকটক

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শীতল যুদ্ধাবস্থা দীর্ঘদিন থেকেই চলে আসছে। সেই যুদ্ধের বলি হয়েছে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে।

এবার সেই যুদ্ধাবস্থার বলি হয়েছে জনপ্রিয় মোবাইল অ্যাপ টিকটক। কিন্তু প্রশ্ন আসতেই পারে, অ্যাপ কিভাবে দুই দেশের মধ্যে বিরোধের বলি হলো?

বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাপ এখন টিকটক। কোনো গানে ঠোঁট মিলিয়ে, গান গেয়ে, ড্যান্স দিয়ে বা অন্য অনেক ধরনের অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও তৈরি করে তরুণদের মধ্যে একটা ক্রেজ তৈরি করেছে অ্যাপটি।

কিন্তু শি জিন পিং এবং ট্রাম্পের মধ্যে বিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে টিকটক। এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও এটি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে। আর ভারতে তো ইতোমধ্যে বন্ধই করে দেয়া হয়েছে অ্যাপটি।

টিকটক কী?

টিকটক মূলত ইউটিউবের একটা মিনি সংস্করণ বলা যায়। তবে এটি ইউটিউবের মতো প্লাটফর্ম নয়। টিকটকে এক মিনিট পর্যন্ত ভিডিও তৈরি করা যায়। নানা ধরনের ফিল্টার ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা এটি করতে পারেন। কোনো গানে ঠোঁট মিলিয়ে বা অভিনয় করে ভিডিও তৈরি করা যায়।

কমেডি এবং মুভির কিছু ক্লিপও সেখানে ভিডিও তৈরির জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। কোনো ব্যবহারকারী একবার এক হাজার ফলোয়ার পেয়ে যান তাহলে তিনি অ্যাপটি থেকে লাইভ করতে পারেন। এমনকি ফ্যান বেশি হলে সেখান থেকে ডিজিটাল গিফট পান এবং একটা সময় সেটা এক্সচেঞ্জ করে মুদ্রায় রূপান্তর করা যায়। এমনকি প্রাইভেট ম্যাসেজও দিতে পারেন ব্যবহারকারীরা।

কতবড় কোম্পানি টিকটক?

২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকেই টিকটক শীর্ষ ডাউনলোড তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী এর ডাউনলোড পরিমাণ এক ধাক্কায় বেড়ে গেছে।

অ্যাপটি নির্মাতা দেশ চীনসহ এখন পর্যন্ত ২০০ কোটির বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে। আর প্রতিমাসে এর সক্রিয় ব্যবহারকারী অন্তত ৮০ কোটি।

ডাউনলোডে শীর্ষ দশ দেশ হলো-ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, তুরষ্ক, মেক্সিকো এবং থাইল্যান্ড।

টিকটকের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কী?

টিকটকের শুরু হয়েছিল তিনটি পৃথক অ্যাপ দিয়ে।

প্রথমটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ মিউজিক্যালি দিয়ে। যা ২০১৪ সালে শুরু হয়। ২০১৬ সালে চীনের বাইটড্যান্স নামের প্রতিষ্ঠান তেমনই একটি অ্যাপ আনে ডুইয়ান নামে। পরে বাইটড্যান্স টিকটক নামে সারাবিশ্বে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

২০১৮ সালে বাইটড্যান্স মিউজিক্যালি কিনে নেয়। আর নাম হয় টিকটক। এরপর থেকেই বাইটড্যান্স চীন থেকে তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। সে কারণে তারা ডিজনির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কেভিন মেয়ারকে টিকটকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেয়।

টিকটক কিভাবে ডেটা সংগ্রহ করে?

টিকটক ব্যবহারকারীদের অনেক পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে। এসবের মধ্যে রয়েছে, কোন ভিডিওটি দেখা হচ্ছে এবং কমেন্ট কি করা হচ্ছে, লোকেশন, ফোনের মডেল এবং অপারেটিং সিস্টেম কি, টাইপ করার সময় কোন বিষয়গুলো লেখা হচ্ছে এমন ডেটা নেয়।

অন্য শত শত অ্যাপ এমন ডেটা সংগ্রহ করে। ফেইসবুকসহ অসংখ্য অ্যাপ ব্যবহারকারীদের আরও অনেক ধরনের তথ্য নিয়ে থাকে।

চীন কি টিকটক দিয়ে নজরদারী করে?

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, টিকটক ব্যবহারকারীদের ডেটা নিয়ে তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এটি পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি।

টিকটক ক্রমাগত গ্রাহকের তথ্য নেয় এবং সেগুলো চীনের বাইরে সংরক্ষণ করে।

টিকটকের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার জননীতি বিষয়ক প্রধান থিও বার্ট্রাম বিবিসিকে বলেছেন, আমরা যে কোনো উপায়েই চীন সরকারের অধীনে রয়েছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

আসলে এখানেও যে বিষয়টি ঘটেছে তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন সরকারের যে সম্পর্ক সেখানে বলি করা হচ্ছে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বাইটড্যান্স যেসব অঞ্চলে তাদের ব্যবসা করে সেখানের স্থানীয় আইন দিয়েই এটি পরিচালিত হয়। যদি টিকটক চীন সরকারের হয়েই কাজ করে, তাহলে অবশ্যইা স্থানীয় আইন ভঙ্গ করতে হবে। তাহলে তো অবশ্যই শাস্তি হবে কিন্তু সেটি তো করা হচ্ছে না, বলেন তিনি।

অবশ্য অনেক বিশ্লেষকের দাবি, টিকটক চীনের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই এটি দেশটির কমিউনিস্ট পার্টিকে অসন্তুষ্ট করা থেকে বিরত থাকবে।

টিকটক কি চীনের প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে?

টিকটকের আরেকটি প্রধান বাধা হচ্ছে এর সেন্সরশিপ।

চীন তাদের ফায়ারওয়াল এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যেখানে বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য তথ্য পাওয়া সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের।

টিকটক কর্মীদের উপর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গত বছর গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, টিকটকে চীনের অনেক কনটেন্ট সেন্সর করা হয়। বিশেষ করে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভের কিছুই টিকটকে আসেনি। সেটা সেন্সর করে বাদ দেয়া হয়েছিল।

ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে টিকটক কর্মীদের বয়ান তুলে ধরেছিল। তারাও জানিয়েছিল, টিকটক অনেক বিষয় সেন্সর করেছে দেশটির সরকারের চাপে।

এই সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এখন চলতে হচ্ছে টিকটককে। তাই বাইরের দেশে ক্রমেই চাপের মুখে পড়ছে চীনের এই স্টার্টআপ।