Home > ধর্ম > সম্পদ বৃদ্ধির চেষ্টা-প্রচেষ্টার কুরআন-হাদীসের ৮ আমল

সম্পদ বৃদ্ধির চেষ্টা-প্রচেষ্টার কুরআন-হাদীসের ৮ আমল

দুনিয়ার জীবনে অর্থ-সম্পদ যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হতে পারে, অন্যদিকে জীবন পরিচালনায় তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামতও।

সুতরাং, আল্লাহর এই নেয়ামত সংগ্রহে আমরা চেষ্টা করতে পারি। সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ নিবন্ধে কুরআন ও হাদীস থেকে ৮টি আমল উল্লেখ করা হলো।

প্রথম আমল : সুদমুক্ত থাকা
সুদের মাধ্যমে মানুষের সম্পদ বিনষ্ট হয়। সুতরাং, সর্বাবস্থায় সুদ থেকে নিরাপদ দূরত্ব অবলম্বন করুন। কুরআনে বলা হয়েছে,

يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ

অর্থ : আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন।–সূরা বাকারা, আয়াত:২৭৬

দ্বিতীয় আমল : পরিবারিক বন্ধন দৃঢ় রাখা
কেউ যদি তার সম্পদকে বৃদ্ধি করতে চায়, তবে তার উচিত তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ককে দৃঢ় রাখা। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,

مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ

অর্থ : যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।–বুখারী, হাদীস : ৫৯৮৫; মুসলিম, হাদীস : ৪৬৩৯

তৃতীয় আমল : আল্লাহর শোকর করা
জীবনের সকল অবস্থায় আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা ও শোকর করা আমাদের জন্য অন্যতম কর্তব্য। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং নিজেদের সম্পদও বৃদ্ধি করে নিতে পারি। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,

وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ

অর্থ : ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’–সূরা ইবরাহীম, আয়াত:৭

চতুর্থ আমল : আল্লাহর ক্ষমার সন্ধান করা
আল্লাহর কাছে সর্বদা নিজেদের ত্রুটির ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করা এবং তার নিকট থেকে ক্ষমার সন্ধান করা আমাদের কর্তব্য। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি আমাদের প্রতি তার প্রদত্ত নিয়ামতেরও বৃদ্ধি করে নিতে পারি। কুরআনে বলা হয়েছে,

فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارٗا . يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا . وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا

অর্থ : আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’।–সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২

হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ

অর্থ : যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’–আবূ দাঊদ, হাদীস:১৫২০; ইবনে মাজাহ, হাদীস:৩৮১৯; তাবরানী, হাদীস:৬২৯১

পঞ্চম আমল : দান করা
বেশি বেশি দান করার মাধ্যমে আমরা যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি, একইসাথে আমরা আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের সম্পদকে বৃদ্ধি করে নিতে পারি। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হাদীসে কুদসীতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন–

أنفِق يا ابنَ آدم، يُنفَق عليك

অর্থ : হে আদম সন্তান, দান করো! তবে আমিও তোমাদের দান করবো।–মুসলিম, হাদীস:৯৯৩

ষষ্ঠ আমল : তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা
আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে আল্লাহর অধিক নেয়ামতের জন্য উপযুক্ত করে নিতে পারি। কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে,

وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا . وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا

অর্থ : আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’–সূরা তালাক, আয়াত:২-৩

সপ্তম আমল : ইবাদতের জন্য ব্যস্ততামুক্ত হওয়া
আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা (রা.) কর্তৃক। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-

إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلاَّ تَفْعَلْ مَلأْتُ يَدَيْكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ

অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’–তিরমিযী, হাদীস:২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ, হাদীস: ৮৬৮১; ইবনে মাজাহ হাদীস:৪১০৭

অষ্টম আমল : আল্লাহর কাছে প্রার্থনা
আমাদের নিজেদের জন্য নিজ নিজ ভাষায় আল্লাহর কাছে স্বচ্ছলতা কামনা করা চাই। দরিদ্র ব্যক্তির স্বচ্ছলতা অর্জনে দুআ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। হাদীসে বিভিন্ন দুআ উল্লেখিত হয়েছে। কুরআনেও আল্লাহ এমন দুআ উল্লেখ করেছেন। দুআটি হচ্ছে,

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : রাব্বানা আ-তিনা ফী-দ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফীল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।–সূরা বাকারাহ, আয়াত:২০১

এছাড়া, গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করে যাওয়া, নবীজির উপর দরূদ পড়া, বারবার হজ-উমরা করা, দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা, বিয়ে করা, আল্লাহর পথে হিজরত করা ইত্যাদি আমলগুলোও কুরআন-হাদীসে বর্ণিত আয় বাড়ানোর আমলের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর নেয়ামতের অংশ হিসেবে কল্যাণকর সম্পদ দান করুন। আমীন।