Home > জাতীয় > ৩২ নম্বর বাড়িতে ফ্রীডম পার্টির হামলায় ক্যাসিনো খালেদ জড়িত ছিলেন

৩২ নম্বর বাড়িতে ফ্রীডম পার্টির হামলায় ক্যাসিনো খালেদ জড়িত ছিলেন

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ১৯৮৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ছিলেন।  ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টার সময় সশরীরেই উপস্থিত ছিলেন তিনি। তার যোগসূত্র তৎকালীন ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে। ওই হামলা মামলাসহ আরও অনেক আলোচিত হত্যা মামলার আসামি হয়েও কখনই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি তাকে। তার বাবা আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ছিলেন একজন প্রভাবশালী আইনজীবী। তিনি ছেলেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন প্রতিবারই।

এরপর আবার ভোল পাল্টে, অর্থ আর ক্ষমতার জোরে বাগিয়ে নেন মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও। মালিক হন অঢেল সম্পদের। তবে শেষ রক্ষা হয়নি অবশেষে। রাজধানীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের হাতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর আটক হন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ফ্রিডম পার্টির হামলায় অংশ নিয়েছিলেন খালেদ। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় হাবিলদার জহিরুল হক বাদী হয়ে দুটি পৃথক মামলা করেন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এ মামলায় মানিক-মুরাদসহ ফ্রিডম পার্টির ১১ জনের সাজা হলেও বেঁচে যান খালেদ। যদিও ওই ঘটনার পর অস্তিত্ব পায়নি মর্মে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে মামলাটি পুনরায় তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার খালেক উজ্জামান ১৬ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় দেখা যায়- আসামি তালিকায় খালেদ অলিভি নামে একজনের নাম আছে। যাকে ১৯৯১ সালে সূত্রাপুর থানার একটি মামলার রেফারেন্সে মৃত দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লিখিত মৃত ৩ আসামির মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হলেও খালেদ অলিভি ও অন্যজন ঠিক কীভাবে মারা গেল তা বলা হয়নি। সূত্রাপুর থানাতেও নেই খালেদের মৃত্যু সংক্রান্ত নথি।

১৯৯৪ সালে শাহজাহানপুর কলোনির আলোচিত পলাশ হত্যা মামলায় আসামির তালিকাতেও পাওয়া যায় খালেদের নাম। কিন্তু সেখানে মেলেনি পিতার নাম ও ঠিকানা। এখানেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন খালেদ। একাধিক মামলায় শাহজাহানপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার মানিকের সঙ্গে খালেদ নামটিও এসেছে। আর সে সময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিকের ছায়াতেই সন্ত্রাসী হিসেবে বেড়ে ওঠেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী মোহাম্মদ আলী জানান, বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলার ঘটনায় খালেদ জড়িত ছিলেন বলে তিনি জানেন।

একদিন খালেদের বাবা তাকে বলেছিলেন- তিনি আইনজীবী হয়েছিলেন বলেই ছেলের ওইসব মামলা গায়েব করতে পেরেছিলেন। জানা যায়, শুধু ওই দুই মামলাতেই নয়, আরও অনেক মামলায় খালেদের নাম এলেও তাকে কখনই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। তার বাবা ছিলেন বিএনপিপন্থি প্রভাবশালী আইনজীবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। ১৯৯১ সালে সূত্রাপুর থানায় করা মামলায় নিহত ব্যক্তি অলিভির নামের আগে খালেদ জুড়ে দেওয়া হয়। ফলে ১৯৮৯ সালের মামলার আসামি খালেদের অস্তিত্ব সুকৌশলে মুছে ফেলা হয়।

যা ঘটেছিল সেই রাতে : ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তখন দোতলার কক্ষে অবস্থান করছেন। ভবনের বারান্দা, নিচতলার বিভিন্ন কামরা, বারান্দা, বাগানে অসংখ্য নেতা-কর্মী। কেউ ঘুমিয়ে আছেন, কেউ কেউ রাজনৈতিক আলাপে ব্যস্ত। হঠাৎ বোমার বিকট শব্দ। বঙ্গবন্ধু ভবনের মূল ফটকের সামনেই ধোঁয়ার কু লী। এরপরই মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। ভবনের সামনে ১৫/২০ জন অস্ত্রধারী। বঙ্গবন্ধু ভবনের নিরাপত্তারক্ষীরাও প্রাণপণ যুদ্ধ শুরু করে। নিরাপত্তারক্ষী হাবিলদার জহিরুল হক ও কনস্টেবল জাকির হোসেন সেই হামলা প্রতিহত করে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে।