বিনিয়োগে খরা, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা, ব্যাংক আমানতের সুদহার কম ও পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতাসহ নানা কারণে এখন সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে এখনও দ্বিগুণ মুনাফা মিলছে সঞ্চয়পত্রে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শেয়ারবাজারে চলছে মন্দাভাব। তাই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
এই বোঝা লাঘবে আবারও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন ‘সঞ্চয়পত্রের সুদহার পর্যালোচনা করা হবে। বাজারের সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হলেই পর্যালোচনা করা হয়। এ বিষয়ে ৭ আগস্ট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১২ মাসে মোট ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। আর শুধু মুনাফা পরিশোধ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।
অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। সেই হিসেবে বিগত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র নেট বিক্রি বেড়েছে ১৬ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বা ৫৪ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদ পূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেয়া হয়। প্রতিমাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নেট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নেট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর আগের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকার। সঞ্চয়পত্র বিক্রি হলেও তুলনামূলক কম মূল ও মুনাফা পরিশোধের কারণে সরকারের নেট ঋণ দাঁড়িয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে মূল ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ২২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মুনাফা পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সুদহার : সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
সর্বশেষ তথ্য মতে, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার। ওই মাসে মূল ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। ফলে ওই মাসে সরকারের নেট ঋণ হয় তিন হাজার ১৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।