রাজধানীর বনানীতে চীনা নাগরিক গাওজিয়ান হুই হত্যারহস্যের জট খোলেনি এখনও। কে বা কারা কেন তাকে হত্যা করেছে, নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, বাসার ভেতরেই হত্যা করা হয় তাকে। এর পর গুম করার উদ্দেশ্যে লাশটি নিয়ে যাওয়া হয় ভবনের পেছনে। সেখানে তাড়াহুড়ো করে মাটিচাপা দেওয়ার সময় কেউ দেখে ফেলায় বা কাছাকাছি এসে পড়ায় জড়িতরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এ কারণেই মৃতের পায়ের একাংশ ও চুল বেরিয়ে ছিল। এ ঘটনায় নিহতের গৃহকর্মী, গাড়িচালক, বাসার নিরাপত্তা কর্মীসহ ছয়জনকে বুধবারই আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তাদের।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রী ঢাকায় এসেছেন। তবে তিনি হত্যার কারণ সম্পর্কে পুলিশকে কোনো ধারণা দিতে পারেননি। কারও সঙ্গে তার স্বামীর ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল বলেও শোনেননি। গাওজিয়ানের এক ব্যবসায়িক অংশীদার রয়েছেন চীনে। ওই নারী শুক্রবার ঢাকায় আসছেন। তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
বনানী এ-ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর বাসার ছয় তলায় ৬/বি ফ্ল্যাটে থাকতেন পাথর ব্যবসায়ী গাওজিয়ান। বুধবার বাসার পেছনে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বুধবার রাতে তার ঘনিষ্ঠজন ঝাং শু হং বাদী হয়ে বনানী থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানান, হত্যার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না পাওয়া গেলেও ব্যবসায়িক বিরোধের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গাওজিয়ানের বাসা থেকে এখন পর্যন্ত কিছু খোয়া যাওয়ার তথ্য মেলেনি। হত্যাকাণ্ডের আগে তিনি প্রায় ছয় লাখ টাকার মালপত্র কিনেছিলেন। তার সবই আছে। ঘরে নগদ পাঁচ লাখ টাকা, ল্যাপটপ, ঘড়ি ও আংটি ছিল। এর কোনোটিই খোয়া যায়নি। লুটতরাজের উদ্দেশ্যে খুন হলে এগুলো থাকার কথা নয়। বুধবার সকালে তার গৃহকর্মী ফরিদা বেগম গিয়ে বাসার দরজা খোলা পান। গৃহকর্তা বাসায় আছেন ভেবে তিনি ঘর গোছানো ও পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করেন। ফলে ঘটনার কিছু আলামত নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তারপরও যেটুকু পাওয়া গেছে, তা বিশ্নেষণ করে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে, বাসার ভেতরেই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক গৃহকর্মী ফরিদা, গাড়িচালক সুলতানসহ অন্যদের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া জানান, অপরাধ-সম্পৃক্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করতে চায় না পুলিশ। তবে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার আশায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ঘরের ভেতর হত্যার পর লাশ বাইরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বাসার কারও নজরে না আসা রহস্যজনক। সন্দেহ করা হচ্ছে, আটক ছয়জনের এক বা একাধিক জন এ হত্যায় যুক্ত থাকতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত তারা কিছু স্বীকার করেননি। এ ছাড়া মঙ্গলবার সারাদিন কারা ওই ফ্ল্যাটে গেছেন; ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে তাদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের সবার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গাওজিয়ানের বনানীর বাসায় বৃহস্পতিবার দিনভর ছিল তার পরিচিত চীনা নাগরিকদের ভিড়। তারা নিহতের স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। দেড় বছর আগে গাওজিয়ান বনানীর এ বাসা ভাড়া নেন। তার স্ত্রী-সন্তানেরা চীন থেকে মাঝেমধ্যে এসে থাকতেন। তবে মঙ্গলবার রাতের হত্যাকাণ্ডের সময় তারা কেউ বাসায় ছিলেন না। বাসার সিসিটিভি ক্যামেরা অকার্যকর থাকায় ওই সময়ের কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। গাওজিয়ান সর্বশেষ পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে পাথর সরবরাহের কাজ করছিলেন।